ব্লগিং শুরু করবো কিভাবে? ব্লগ শুরু করার পদ্ধতি

কিভাবে ব্লগিং শুরু করবেন?

ব্লগিং এই শব্দটা যেন আমাদের এখন অতিপরিচিত হয়ে গেছে, হবেই না বা কেন? আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা রকম প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের ব্লগ সাইটে ভিজিট করছি, প্রয়োজনীয় তথ্য নিচ্ছি, বিনোদন নিচ্ছি।সাধারণ মানুষজন ব্লগ সাইটে ভিজিট করছে তাঁদের প্রয়োজনীয় তথ্যের চাহিদা মিটাচ্ছে ব্যাস এইটুকুতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু আমার মতো কিছু আইটি পাগল মানুষ রয়েছে যাদের, ব্লগিং এর প্রতি আগ্রহের অন্যতম কারণ হলো নিজেদের একটি ব্লগ সাইট প্রতিষ্ঠিত করা। 

আরেকদল  রয়েছে লেখক, যাদের ধ্যান-জ্ঞান সব কিছু লেখাকেই কেন্দ্র করে। কিন্তু এই বিশ্বয়নের যুগে লেখকদের এই লেখা পাঠকদের দুয়াবে পৌঁছে দিতে হলে তাঁদের প্রবেশ করতে হবে আইটি দুনিয়াতে, আর লেখা পাঠকের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য আইটি দুনিয়াতে ব্লগিং এর অদ্বিতীয় কিছু এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। তাই লেখকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ব্লগিং।সব মিলিয়ে আমরা যারা ব্লগিং শুরু করতে আগ্রহী তাঁরা হয়তো কেউ কেউ ব্লগিং কি তা মোটামুটি জানি, ব্লগিং কিভাবে শুরু করবো সেটাও জানি কিন্তু সাহস পাচ্ছি না বা পরিপূর্ণ কোন দিক-নির্দেশনা পাচ্ছি না। আবার অনেকেই রয়েছে যাদের ব্লগিং শুরু করতে তো অনেক ইচ্ছা কিন্তু ব্লগিং খায়, না মাথায় দেয় এটা পর্যন্ত জানেনা, যার ফলে তাঁদেরও ইচ্ছে থাকা স্বত্তে ব্লগিং ক্যারিয়ারে প্রবেশ করা হচ্ছে না। 

তো এই যে, অল্প জানা, বেশি জানা, মোটামুটি জানা, মানে জানা-অজানা সকল পর্যায়ের ভবিষ্যত ব্লগারদের কথা মাথায় রেখেই আমাদের আইটি কথার এই ব্লগিং সিরিজ শুরু করা হয়েছে। এই সিরিজে আমরা চেষ্টা করবো ব্লগিং এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দিক নির্দেশনা দিতে এবং ব্লগিং নিয়ে অজানা সব তথ্য শেয়ার করতে।  সেই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী আজকের এই ৩ নাম্বার পর্বে আমরা আলোচনা করবো ব্লগিং শুরু করবো কিভাবো? ব্লগ শুরু করার পদ্ধতি নিয়ে।

ব্লগিং শুরু করার পদ্ধতি

ব্লগিং কি? যদি সোজা বাংলায় বলতে যাই  তাহলে, ব্লগিং এমন একটি জিনিস যার মাধ্যমে লেখালেখি করা যায় এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল পর্যায়ের মানুষের কাছে সেই লেখা পৌঁছে দেয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ: এই যে আপনি এই লেখাটি যে পড়ছেন, এটাই ব্লগিং এটা একটা ব্লগ সাইট।

আজ থেকে ২৪ বছর আগে ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম ব্লগিং এর যাত্রা শুরু হয়। ব্লগিং যখন সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিলো মানুষজন তখন ব্লগিং কে পার্সোনাল ডাইরি হিসেবে নিয়েছিল। পার্সোনাল ডাইরি তে যেমন আমরা নিজের ইচ্ছে মত যা খুঁশি তাই লিখে রাখতে পারি, তেমনি ব্লগিং এর মাধ্যমেও লোকজন লেখালিখি করতো শুধু পার্থক্য এতটুকুই যে তাঁর সেই লেখা সবাই পড়তে পারবে। 

ব্লগিং শুরু করতে গেলে প্রথমেই যেটা ঠিক করতে হবে সেটা হলো কি নিয়ে ব্লগিং শুরু করবেন? কোন নীশে ব্লগিং করবেন? নীশ  বলতে মার্কেটিং এর ভাষায় বোঝায় (বিষয়) । ব্লগের প্রথম এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট হচ্ছে সঠিক ভাবে নীশ সিলেক্ট করা। ব্লগিং করতে এসে অধিকাংশ মানুষ ব্যার্থ হয় সঠিক নীশ সিলেক্ট করতে না পেরে। তাই আমরা যারা ব্লগিং শুরু করতে ইচ্ছুক তাঁরা খুব ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় সঠিক নীশ টি সিলেক্ট করবো।

কিভাবে নীশ সিলেক্ট করবেন?

প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনার পছন্দের টপিকগুলো কি কি? কোন বিষয়গুলো নিয়ে আপনে অনাবরত লিখে যেতে পারবেন? অনাবরত মানে একদম অনাবরত, যেই লেখার জন্য আপনাকে টাকা না দিলেও খুঁশি মনে ননস্টপ লিখে যেতে পারবেন।আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন, উদাহরণসরূপ ধরে নিলাম আপনার উত্তরে নিচের ৩ টি টপিক পাওয়া গেছে।

  • খেলাধুলা
  • প্রযুক্তি
  • স্বাস্থ্য চিকিৎসা

এখন আবার নিজেকে প্রশ্ন করুন এই ৩ টি টপিকে আপনার জ্ঞান কতটুকু? আপনার লেখা পড়ে পাঠকরা নতুন কি কি জানতে পারবে? পাঠকরা কতটুকু উপকৃত হবে? আপনার জ্ঞান দ্বারা কি সত্যি কোয়ালিটি কনটেন্ট লিখতে পারবেন? যদি নিজে থেকেই আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান তাহলে এই ৩ টি টপিক থেকে আপনে যেই টপিকে ভালো লেখালেখি করতে পারবেন সেটা বাছাই করুন।আর যদি এখনো কনফিউশন থাকেন তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই, ৩ টি টপিকের প্রত্যেকটি টপিকে ১৫ টি আর্টিকেল লিখে ফেলুন, তাঁরপর সেগুলো ভালো করে পড়ে নিজেই যাচাই করে দেখুন কোন টপিকের আর্টিকেল সুন্দর হচ্ছে, কোন টপিকের ওপর আর্টিকেল লিখে ভালো লাগছে মনে হচ্ছে আরো লিখতে পারবো।

এক কথায় নীশ সিলেক্ট করার সময় আপনে যেই নীশই সিলেক্ট করুন না কেন, সেই নীশের ওপর ১৫-২০ টা আর্টিকেল লিখে ফেলুন এবং তাঁরপর দেখুন লেখার পরও আপনার আগ্রহ থাকে কিনা সেই নীশের ওপর। যদি ১৫-২০ টা আর্টিকেল লেখার পরও আপনার আগ্রহ থাকে তাহলে সেই নীশকেই ফাইনাল হিসেবে সিলেক্ট করে ফেলুন।

নীশ সিলেক্ট করার সময় যা যা করবেন না

অধিকাংশ ব্লগারই নীশ সিলেক্ট করতে ভুল করে কেন জানেন? প্রথমতো তাঁদের পছন্দের নীশ কি সেই বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে অন্য ব্লগরার কোন নীশে সাকসেস হয়েছে সেটা নিয়ে লেগে পড়ে। অমুক ব্লগার টেক নীশ নিয়ে কাজ করে এত ডলার কামাচ্ছে, এত এত ভিজিটর পাচ্ছে তাঁর মানে আমাকেও এই নীশেই ঝাপিয়ে পড়তে হবে, উঠে পড়ে লাগতে হবে, হাজার হাজার ডলার কামাতে হবে ব্যাস শুরু হয়ে গেলে। কয়দিনের মধ্যেই সাইট রেডি করে ব্লগিং শুরু করতে গেল তাঁরপর দেখা গেল সেই নীশের ওপর আর কোয়ালীটি কনটেন্ট লিখতে পারছে না, কোয়ালীটি কনটেন্ট তো দূরের কথা কয়েকটা আর্টিকেল লেখার পরে সেই নীশে আর আর্টিকেলই লিখতেই পারছে না, কি লিখবে না লিখবে কোন শব্দই খুঁজে পাচ্ছে না, অথবা একই আর্টিকেল যেটা ইতিমধ্যে ইন্টারনেটে রয়েছে সেটাই রি-রাইট করে লিখছে। যার ফলে ভিজিটর তো পাচ্ছেই না, যদি ভিজিটর আসেও সেই একই আর্টিকেল ঘুরে,ফিরে তাই পুরো আর্টিকেল পড়ছে না। নীশ সিলেক্ট করার সময় কখনোই অন্য কে কোন নীশে সাকসেস পেয়েছে এইসব ভেবে নীশ সিলেক্ট করা যাবে না। 

আমাকে আপনি প্রশ্ন করলেন ভাই ব্লগিং শুরু করবো কোন নীশ নিয়ে কাজ করলে সফলতা পাবো? আমার টেক নীশ ভালো লাগে এই নীশে আমি লেখালেখি করতে পারি তাই আপনাকেও উপদেশ দিয়ে দিলাম টেক নীশে কাজ করেন । কিন্তু দেখা গেলো আপনার টেক নীশ নিয়ে তেমন জানা-শোনা নেই আবার আগ্রহও নেই কিন্তু তাঁরপরও ওই যে আমি বলে দিয়েছি টেক নীশে কাজ করলে সফলতা পাওয়া যাবে তাই আপনিও কোন কিছু না ভেবেই টেক নীশে ব্লগিং শুরু করে দিলেন। একবার ভেবে দেখুন তো এভাবে ব্লগিং করলে কোনদিন সফলতা পাবেন?

আপনি কোন নীশে ব্লগিং করবেন সেটাই যদি না জানেন, যদি নীশ বাছাই করতেই না পারেন অন্যকে দেখে বাছাই করতে হয় বা অন্যর থেকে সাজেশন নিয়ে নীশ সিলেক্ট করতে হয় তাহলে আপনার ব্লগিং ক্যারিয়ারের ভবিষ্যত কি?অনেকেরই ভুল ধারণা এই নীশে টাকা কামানো যাবে বেশি, ওই নীশে টাকা কামানো যাবে না, এটা সম্পূর্ণ একটা ভ্রান্ত ধারণা। মনে রাখবেন যেই নীশে পাঠক রয়েছে সেই নীশে টাকাও রয়েছে। হ্যাঁ পাঠক হয়তো আজ সেই রকম নেই কিন্তু ভবিষ্যতের কথাটাও একবার মাথায় রাখবেন, ভবিষ্যতে সেই নীশের ওপর কি পরিমাণ পাঠক থাকতে পারে। আবার কিছু কিছু নীশ রয়েছে যেই নীশগুলোতে খুব বেশি পরিমাণ পাঠক না থাকলেও ভালো টাকা কামানো যায়। মোট কথা আপনে যেই নীশেই কাজ করুন না কেন, কম-বেশি পাঠক অবশ্যই রয়েছে। যদি আপনি ভ্যালু প্রোভাইড করতে পারেন তাহলে টাকা কামানোর কথা আপনার চিন্তা করতে হবেনা।  স্পনসর পাবার জন্য আপনার ঘুরতে হবে না, আপনাকেই খুঁজে বের করবে স্পনসর দ্বাতারা।

প্রত্যেক নতুন ব্লগারদের জন্য আমাদের একটাই পরামর্শ, ব্লগিং শুরু করার প্রথম পর্যায়েই আগে সঠিক ভাবে নীশ সিলেক্ট করুন। অন্যর মতামত নিয়ে নয়, নিজে কোন নীশে আগ্রহবোধ করেন, কোন নীশে মনের মতো করে লিখে যেতে পারবেন প্রতিনিয়ত এমন নীশ সিলেক্ট করুন। আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি পরবর্তী পর্বে আবার ব্লগিং এর অন্য কোন পার্ট নিয়ে আলোচনা করবো।

1 thought on “ব্লগিং শুরু করবো কিভাবে? ব্লগ শুরু করার পদ্ধতি”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top