রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ১০ টি সহজ উপায় – রাগ কীভাবে কমানো যায়?

রাগ শব্দটি শুনতে ছোট্র হলেও এর প্রভাব কিন্তু আমাদের জীবনে অনেক বড়। প্রত্যেক মানুষের কম-বেশি রাগ আছে, রাগ ছাড়া মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। রাগ আছে এটা সমস্যা না, সমস্যা টা হচ্ছে, রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। 

আমরা প্রায় বলে থাকি, অমুক ব্যাক্তির রাগ নেই, উনি খুবই ঠান্ডা মাথার মানুষ, এটা ভুল কথা- প্রত্যেক মানুষেরই রাগ আছে। আমরা যাদের ধারণা করি রাগ নেই, তাঁদের ও রাগ আছে, কিন্তু তাঁরা তাঁদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে অথবা এমন ও হতে পারে তাঁরা সব জায়গাতে রাগ প্রকাশ করে না, কিংবা আপনার সামনে রাগে না। প্রত্যেক টা জিনিসের একটা ভালো দিক আর একটা মন্দ দিক রয়েছে। তেমনি রাগের ও রয়েছে ভালো,মন্দ দিক। আপনি কোন কাজে আপনার রাগ প্রকাশ করবেন তাঁর ওপর নির্ভর করবে ভালো,মন্দের বিষয়।

মনে করুন আপনার বন্ধু পরীক্ষায় আপনার থেকে ভালো রেজাল্ট করেছে, আপনি যেহুতু তাঁর থেকে খারাপ রেজাল্ট করেছেন তাই সে আপনার সাথে অহংকার দেখালো বা এমন কিছু করলো আপনার সাথে যাতে আপনি অপমানিত বোধ করলেন এবং সেই সাথে আপনার প্রচন্ড রাগ উঠল। এখন ভালো করে বুঝে দেখুন, এই মূহুর্তে আপনি আপনার রাগ কে ভালো কাজে , মন্দ কাজে উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন, দুটোই কিন্তু আপনার উপর নির্ভর করছে। এই পরিস্থিতে ২ টা ঘটণা ঘটতে পারে:

ঘটনা ১ – আপনার বন্ধু আপনাকে অপমান করে রাগ তুলে দিয়েছে, তাই তাঁর সাথে একটা ঝামেলা তৈরি করলেন অথবা প্ল্যান করলেন কিভাবে এর প্রতিশোধ নেয়া যায়।

ঘটনা ২ –  আপনার বন্ধু পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে, তাই আপনার সাথে অহংকার দেখিয়েছে আপনাকে অপমান করেছে, তাই আপনি জেদ করলেন সামনের পরীক্ষায় আপনি তাঁর থেকে ভালো রেজাল্ট করে দেখিয়ে দিবেন।

আরো পড়ুন: ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত হবার উপায়

কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, আমাদের সমাজের ৮০% মানুষই উপরের উভয় ঘটনা থেকে (ঘটনা ১ কে বেঁছে নিবে)। কারণ দিন বদলের সাথে তো আমরা সভ্য হচ্ছি, কিন্তু এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই , যত দিন যাচ্ছে আমাদের ধৈর্য্যর মাত্রা ততই কমে যাচ্ছে এবং রাগ বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের অধৈয্যর মাত্রা ক্রমাগতই বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। 

প্রযুক্তি বিশ্বকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে, মুহূর্তের মধ্যে বসে আমরা সব কিছু হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছি। সব কিছুই যেহেতু অতি দ্রুত ঘটে যাচ্ছে, তাই আমাদের ধৈয্যর মাত্রা কমে গিয়েছে। তাই কোন কাজে কাজে একটু দেরি হলেই আমাদের রাগ উঠে যায়। রাগ যেহেতু আছে তাই রাগ উঠবেই, কিন্তু আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ শিখে নিতে হবে। তো চলুন জেনে নেয়া যাক- 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

চুপ হয়ে যান

যখন দেখবেন রাগ উঠে যাচ্ছে, কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, নিয়ন্ত্রণের বদলে রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে, তখন কিচ্ছু করবেন না শুধু চুপ হয়ে যান। এমন ও হতে পারে আপনি ঠিক আছেন, কিন্তু অন্য কেউ আপনার উপর প্রচুর রেগে গিয়েছে বার বার তর্কে জড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময়ে এই একই পদ্ধতি অবলম্বণ করুন। মনে রাখবেন, দুই জন সমান ভাবে একই সময়ে রেগে গেলে বাজে অবস্থা সৃষ্টি হবে। তাই এই একটি মাত্র পদ্ধতি অবলম্বণের মাধ্যমে রাগ নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলতে পারেন।

তিন সেকেন্ড ‍রুলর্স

মনোবিজ্ঞানিরা একটি গবেষণায় দেখেছেন মানুষের ( শর্ট টেম্পার ) মানে অতি স্বল্প সময়ের জন্য যে রাগ ওঠে তা সাধারণত ২.৫ সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হয় না। এই ২.৫ সেকেন্ডের মধ্যে যদি কোন রিয়েক্ট করে বসেন তাহলে তা বার বার করতেই থাকবেন, অর্থাৎ পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে চলে যাবে।  যখন রাগের বশে কোন কথা বলতে যাবেন, শুধু ৩ সেকেন্ডে অপেক্ষা করবেন। রাগের সময় যদি মাত্র ৩ সেকেন্ড রুলর্স মেনে চলতে পারেন তাহলে  খুব সহজেই রাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবেন।

পর্যাপ্ত ঘুম এবং পুষ্টিকর খাদ্য

রাতে ভালো ঘুম না হবার কারণে সারাদিন মেজাজ খিটখিটে থাকে, যার ফলে মাঝে মাঝে কেউ যদি ভালো কথা  বলে তাতেও রাগ উঠে যায়, ঠিক এমনি শরীর যদি ভালো না থাকে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব বা পেটে ক্ষুদা থাকে তখন ও অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রাগ উঠে যায়।তাই রাগ নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য ঘুমের এবং পুষ্টিকর খাদ্যর কোন বিকল্প নেই। 

গভীড় শ্বাস নিন

রাগ উঠলে বড় বড় গভীড় ভাবে শ্বাস নিন এবং আস্তে আস্তে ছাড়ুন, এভাবে কয়েক মিনিট ধরে চর্চা করুন। গভীড় ভাবে শ্বাস নেবার ফলে আপনার মস্তিষ্কে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছাবে এবং রাগ একটু হলেও নিয়ন্ত্রে চলে আসবে।

নবীজির আদেশ মেনে চলুন

প্রচন্ড রাগের সময় অযু করুন, দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়ুন, বসে থাকলে শুয়ে পড়ুন এতে করে রাগ নিয়ন্ত্রেণে আসবে।

ব্যায়াম করুন 

বেশি বেশি ব্যায়াম করুন শরীর ক্লান্ত হবে এমন কোন কাজ করুন, যার ফলে শরীর দূর্বল হয়ে যাবে রাগ করার বদলে আপনার মন-মেজাজ অন্য দিকে চলে যাবে।

বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করুন

যখন দেখবেন আপনার রাগ নিয়ন্ত্রেনে আনতে পারছেন না বা অপর পক্ষের কারো রাগ কমছেই না, তখন যেই জায়গায় অবস্থান করছিলেন সেই জায়গা ত্যাগ করে চলে যান, এতে করে ঝামেলা বেশি দূর আগাবে না । যখন উভয়ের রাগ নিয়ন্ত্রেনে চলে আসবে তখন আবার দেখা করতে পারবেন।

অন্যর কথা সব সময় বিশ্বাস করবেন না

সমাজে এক ধরণের মানুষ আছে যাদের কেউ এসে যদি বলে, চিল তোমার কান নিয়ে গেছে, সে সাথে সাথে চিলের পিছে দৌঁড়াবে কানে হাত দিয়ে দেখবে না কান ঠিক আছে কিনা। ঠিক এই রকম ঘটনা প্রতিনিয়তই আমাদের আশে-পাশে ঘটে চলেছে, অন্যর কারো কথা শুনে আমরা আরেক জনের সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করি তাঁর উপর রেগে যাই। তাই নিজের কানে কিছু না শুনে অন্যর কথায় কারো উপর রাগ করা থেকে বিরত থাকুন। যখনি এই ধরনের কথা শুনে রাগ উঠবে তখনই মনে করবেন আমি তে নিজের চোখে শুনিনি বা দেখিনি।

ক্ষমা করতে শিখুন

অনেক সময় এমন পরিস্থিতি হয়, যেখানে আপনার কোন ভুল নেই অথচ সবাই আপনাকে ভুল বুঝছে, কোন মতেই আপনার কথা শুনছে না, কিছু বুঝে ওঠার আগেই আপনাকে আক্রমণ করে বসেছে, এই ধরণের পরিস্থিতে কোন ধরণের রিয়েক্ট করার থেকে না করাই ভালো। কেননা সবাই তখন আপনার ওপর রেগে থাকবে, আপনি যাই বলেন না কেন তাঁদের মাথায় তা ঢুকবে না। তাই তখন কোন রিয়েক্ট করার থেকে চুপ থাকা বা অন্য কোথাও কিছু সময়ের জন্য চলে যাওয়া ভালো। আপনি যদি সত্যি ঠিক হয়ে থাকেন তাহলে তাঁরা তাঁদের ভুল বুঝতে পারবে এবং আপনার কাছে ক্ষমা চাইবে। তাই এই ধরণের অবস্থা সৃষ্টি হলে ক্ষমা করে দিন, আপনি তো জানেন আপনি ঠিক, কোন ভুল করেননি।

সমাধানের চেষ্টা করুন

রাগের সময় অযথা রাগ আরো না বাড়িয়ে চিন্তা করুন, কেন রাগ উঠলো, দোষটা কার ছিলো, কোন ভুল কথা বা কাজের জন্য এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো এইসব ভাবতে থাকুন এর ফলে রাগ সৃষ্টির হবার কারণ জানতে পারবেন পাশাপাশি চিন্তা করার এই সময়ের মধ্যেই রাগ কেটে যাবে এবং যে কারণে রাগ সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে শিক্ষা নিতে পারবেন।

সব শেষে বলতে চাই, ইসলামের দৃষ্টিতে রাগ নিয়ন্ত্রণ করাটাও একটা ইবাদাত, যেই ব্যাক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সে সফল হবে। শুধু মাত্র এই রাগের কারণে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যেতে যারে। দীর্ঘ দিনের সংসার মাত্র ১০ মিনিটের রাগে বিচ্ছেদ ঘটে যাচ্ছে, ভাই ভাইয়ের ওপর রাগ করে আলাদা হয়ে যাচ্ছে, সন্তান বাবা কে বাসা থেকে বের করে দিচ্ছে এইরকম শত শত ঘটনা আমাদের চারপাশে ঘটে যাচ্ছে শুধু মাত্র এই একটি কারণে রাগ নিয়ন্ত্রন না করতে পারা। 

রাগের সময় শয়তান তাঁর দলবল নিয়ে আরো রাগ বাড়িয়ে দিতে থাকে, যাতে করে বড় কোন পাপ করানো যায়। তাই রাগ করার আগে একবার ভাবুন আপনার ক্ষণীকের রাগের জন্য সারা জীবন পস্তাতে হতে পারে, এবং এটা শুধু এই জীবনেই না পরকালের জীবনেও রাগের জন্য পেতে হবে কঠিন শাস্তি।পৃথীবির বড় বড় মানুষ গুলোর দিকে তাঁকান দেখতে পারবেন তাঁদের অধিকাংশই ঠান্ডা মাথার মানুষ। তাঁদের রাগের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে আর এই জন্যই তাঁরা সফল হতে পেরেছেন। তাই সফল হতে চাইলে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কোন বিকল্প নেই। একটা প্রবাদ আছে ( রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন )। এই ছিলো রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়। আশা করি তথ্য গুলোর মাধ্যমে আপনিও নিজে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখে যাবেন। যদি লেখাটি ভালো লেগে থাকে তবে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top