নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় – ৬ মাসে নিজেকে পরিবর্তন করুন

মানুষ সারা জীবন একভাবে বাঁচতে পারে না। সুস্থ সুন্দর জীবন-যাপন করার জন্য তাঁকে এক সময় পরিবর্তন হতেই হয়। জন্মের পর থেকেই আমরা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আসছি। শৈশব ছিলো এক রকম আবার কৈশোর সময় কেটেছে আরেক রকম, তেমনি ভাবে যৌবন কাল কেটে যাচ্ছে অন্য রকম ভাবে, আবার সামনে বৃদ্ধ কাল কাটবে ভিন্ন রকম এভাবেই সময়ের সাথে সাথে আমরা পরিবর্তিত হয়ে আসছি।

দুনিয়াটা একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র, এখানে প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করে যেতে হয়। এই যুদ্ধের অন্যতম একটা নিয়ম হলো, সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করা। যারা এই পরিবর্তন কে আমন্ত্রণের সাথে গ্রহণ করে তাঁরাই জীবনে সফল হয়। অপরদিকে যারা সারা জীবন এক ভাবে কাটিয়ে দিতে চায় কোন পরিবর্তন ছাড়া, তাঁরা সারা জীবন ব্যর্থতায় কাটিয়ে দেয়।বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আবিষ্কার এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের  ফলে দুনিয়া প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে, চার পাশে তৈরি হয়েছে প্রতিযোগিতা। যারা দ্রুত নিজেকে পরিবর্তন করবে, সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপডেট রাখবে, তাঁরাই এই প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করতে পারবে। আমাদের ব্যবহৃত স্মার্টফোনটি কেও আপডেট রাখতে হয়, তাহলে ভেবে দেখুন নিজেকে কেন আপডেট রাখবেন না? আপনি যে ভাবেই জীবন কাটান না কেন, কোন না কোন সময় আপনাকে পরিবর্তন হতেই হবে। তাই যত তাড়াতাড়ি নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবেন, অন্যদের থেকে তত বেশি প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবেন। তো কিভাবে করবেন নিজেকে পরিবর্তন? 

নিজেকে পরিবর্তন করার উপায়

প্রথমত ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন আপনার মাঝে কি কি পরিবর্তন করতে হবে, আপনার মাঝে কোন ধরণের বাজে অভ্যাস আছে সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন। তাঁরপর আপনার জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে ফেলুন। ভবিষ্যতে কোথায় নিজেকে দেখতে চান তা লিখে ফেলুন এরপর আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য কি কি করতে হবে তা লিখুন। আগমাী ৬ মাস আপনি কি কি করতে যাচ্ছেন,  সবশেষে একটা রোড ম্যাপ তৈরি করে ফেলুন।এবার আপনার রোড ম্যাপ তৈরি হয়ে গিয়েছে, এখন আপনি জানেন আপনাকে কিভাবে আগাতে হবে।

প্রতিদিনের কাজ গুলোকে আলাদা আলাদা সময়ে ভাগ করে নিন, আপনার ২৪ ঘণ্টা কখন কিভাবে কাজে লাগাবেন তাঁর একটি রুটিন তৈরি করে ফেলুন এবং ঘুমের জন্য রুটিনে একটি পারফেক্ট সময় নির্ধারন করে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন ঘুমের টাইম-টেবিল যেন প্রতিদিন একই সময়ে হয়। এখন আপনার রোড ম্যাপ তৈরি পাশাপাশি আপনি সারাদিন কিভাবে কাজে করবেন তাঁরও একটি রুটিন তৈরি হয়ে গিয়েছে। আপনার ২০% কাজ প্রায় শেষ। এবার আপনাকে শুধু আপনার রোড ম্যাপ এবং রুটিন অনুযায়ী চলতে হবে।

আরো পড়ুন: ১৬ থেকে ২১ বছর বয়সে কি করা উচিত?

রাতে দ্রুত ঘুমাতে যান এবং সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠুন। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই আগে নামাজ আদায় করুন। তাঁরপর কমপক্ষে ১৫-৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।

প্রতিদিন কিছু সময় পত্রিকা পড়ার পিছে ব্যায় করুন।

অজুহাত বন্ধ করুন। আজ ভালো লাগছে না কাল থেকে করবো, আজ তো ছুটির দিন আজকে একটু বিশ্রাম নেই, এইসব নানা রকম অজুহাত দেওয়া বন্ধ করে দিন। যত যাই হোক প্রতিদিনের রুটিন মেনে চলুন। মনে রাখবেন অজুহাতের মাধ্যমে আপনার নিজের ক্ষতি নিজেই করছেন, নিজের সাথেই নিজে ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন।

ফেসবুক,ইউটিউব,ইনস্টাগ্রাম এইসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার কমিয়ে ফেলুন। দিনের একটা নিদিষ্ট সময়ে শুধু ব্যবহার করুন তাছাড়া বাদ-বাকি সময় এইসব থেকে দূরে থাকুন। সম্ভব হলে পুরোপুরি ভাবেই এইসব বাদ দিয়ে দিন, শুধু কাজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন।

যত বেশি পারবেন বই পড়ুন। বই পড়ার এই একটা অভ্যাস আপনার জীবন কে অতুলনীয় ভাবে পরিবর্তন করে দিবে। পৃথিবীর বড় বড় মানুষদের দিকে তাকিয়ে দেখুন তাঁরা প্রত্যেক মাসে কয়টা করে বই শেষ করে। তাই জ্ঞান বাড়ানোর জন্য বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। যত বেশি সম্ভব বই পড়তে থাকুন।

প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন। ইন্টারনেটে অযথা সময় নষ্ট না করে বিভিন্ন বিষয়ে নিজের স্কিল ডেভেলোপ করুন। ইউটিউব, ইউডেমি, স্কিল শেয়ার, টেন মিনিট স্কুল এই প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে বিভিন্ন বিষয়ে স্কিলড হতে পারবেন, তাই শুধু শুধু আপনার মূল্যবান সময় গুলোকে নষ্ট না করে কাজে লাগান।

অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনা বন্ধ করুন। কাজ না করে শুধু বসে বসে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন কেননা এতে কোন লাভ হবে না। এছাড়া কোন কাজ শুরু করার আগেই ব্যর্থ হবার চিন্তা-ভাবনা মাথায় আনবেন না। ব্যর্থ হলে হবেন আপনি চেষ্টা তো করেছেন। 

সবাইকে খুশি রাখা এবং সব সময় হ্যাঁ বলা বন্ধ করুন। আপনি এক সাথে একই সময়ে সবাইকে খুশি রাখতে পারবেন না, এক পক্ষকে খুশি রাখতে গেলে অপর পক্ষ হয়তো আপনার ওপর রেগে যাবে এইসব নিয়ে ভাববেন না। আপনি হয়তো এখন একটা জরুরি কাজ করছেন, কেউ আপনাকে ফোন দিয়ে বাইরে নিয়ে যাবে ডাকছে, কিন্তু এখন  বাইরে গেলে আপনার সারাদিনের রুটিন এলোমেলো হয়ে যাবে অথচ না বলতেও পারছেন না। এইরকম পরিস্থিতে আপনাকে না বলা শিখতে হবে, কেননা আপনার যেই কাজটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটাই আগে করতে হবে। তাই সব সময় হ্যাঁ বলবেন না, না বলতে শিখুন।

পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে বেশি সময় ব্যায় করুন এতে করে আপনি খুশি থাকবেন এবং আপনার কাজের গতি আরো বেড়ে যাবে।

আপনি যেই অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য নিজেকে পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন, ওই অবস্থানে ইতি মধ্যে যারা পৌঁছে গেছে তাঁদের অনুসরণ করুন, তাঁদের সাথে আলোচনা করতে পারেন, বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য নিতে পারেন।

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে সময় নষ্ট করার বদলে ( কোরা, মিডিয়াম ) এই গুলো ব্যাবহার শুরু করুন, কোরাতে প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট সময় ব্যায় করে দেখুন আপনার চিন্তা-ভাবনা অন্য রকম হয়ে যাবে। 

সফল মানুষদের জীবনী পড়ুন। সফল মানুষেরা কিভাবে সফল হলো, কোথা থেকে শুরু করলো, তাঁদের মাঝে এমন কি অভ্যাস ছিলো যা অন্যদের থেকে আলাদা এইসব বিশ্লেষণ করে দেখুন।

ভ্রমণ করুন, সৃষ্টিকর্তার বানানো সুন্দর প্রাকৃতি কাছে থেকে দেখুন। ভ্রমণের ফলে আপনার মন নতুন করে শক্তি পাবে পাশাপাশি ভ্রমণ থেকে অনেক শিক্ষা অর্জন করতে পারবেন।

ইংরেজী শিখুন, ইংরেজী ছাড়া আপনি জীবনে বেশি দূর আগাতে পারবেন না। তাই আজ হোক বা কাল হোক আপনাকে শিখতেই হবে, প্রতিদিন ইংরেজী চর্চা শুরু করুন ৬ মাসে পর পূর্বের থেকে অনেক ভালো ফলাফল পাবেন।

নিজের ধর্মের কথা মেনে পরিপূর্ণ মানুষ হবার চেষ্টা করুন, এতে করে দুনিয়া আখিরাত উভয়ে সফল হতে পারবেন। ‍নিজেকে পরিবর্তন করার অন্যতম মাধ্যম ধর্ম বিধান মেনে জীবন-যাপন করা।

✅  বাজে সঙ্গ ত্যাগ করুন। আপনি যত যাই করেন না কেন, পরিবর্তন হতে পারবেন না যদি আপনার সঙ্গ খারাপ হয়। একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে ( সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ) তাই বাজে সঙ্গ থাকলে অতি দ্রুত তা পরিহার করে ফেলুন।

সব শেষে বলবো: স্বল্প পরিসরে শুরু করে দিন কিন্তু কালকে নয় আজকে থেকেই নিজেকে পরিবর্তন করা শুরু করে দিন, কেননা যত দেরি করবেন ততই পিছিয়ে পড়বেন। 
উপরের যে কয়টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো, এগুলো শুনতে সহজ মনে হলেও মেনে চলতে প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হবে। হুট করে কালকে ভোরে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন না, যদি উঠেও পড়েন তাঁরপরের দিন দেখা যাবে সারাদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন এমন হবেই প্রথম প্রথম কিন্তু হাল ছেড়ে দিয়েন না। এই সামান্য কয়েকটা নিয়ম অনুসরণ করে আপনি ৬ মাসের মধ্য নিজেকে যেমন চান তেমন ভাবে গড়ে তুলতে পারবেন। তো এই ছিলো নিজেকে পরিবর্তন করার উপায়। সব গুলো নিয়ম অনুসরণ করলে আশা করি ৬ মাসে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবেন।

2 thoughts on “নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় – ৬ মাসে নিজেকে পরিবর্তন করুন”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top