সেরা লিনাক্স হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম

লিনাক্স একটি ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেম। লিনাক্স কার্নেলের উপর নির্ভর করে অনেক গুলো লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন তৈরি করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। মূলত বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য বিশেষ আলাদা ডিস্ট্রিবিউশন পাওয়া যায়। ২০২১ সালের শুরুর দিকে মঙ্গল গ্রহে পাঠানো রোভার বিশেষ ভাবে ডেভেলপ করা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে চলছে। অন্যদিকে ওয়েব সার্ভার তৈরি এবং ম্যানেজমেন্ট করার জন্য ফেডোরা বহুল ব্যবহৃত লিনাক্স ডিস্ট্রো। মোটকথা আপনি যেমন ইচ্ছা তেমন ডিজাইন এবং কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন। হ্যাকিং কে টার্গেট করে লিনাক্সের এমন অনেক ডিস্ট্রো প্রচলিত আছে। আজকের পোষ্টে আপনাদের সাথে সেরা লিনাক্স হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করবো। আশাকরি আপনাকে সবথেকে বেস্ট লিনাক্স হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম খুঁজে পেতে লেখাটি সাহায্য করবে।

লিনাক্স ডিস্ট্রো কি?

লিনাক্স একটি ওপেনসোর্স ইউনিক্সের মত অপারেটিং সিস্টেম। লিনাক্স আসলে একটি কার্নেলের নাম। এই লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন লিনাক্স ডিস্ট্রো তৈরি করা হয় যার সমন্বয়কে আমরা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম বলি। যেমন ধরুন লিনাক্স মিন্ট, ডিবিয়ান, উবান্টু, আর্চ ইত্যাদি হলো লিনাক্স কার্নেল ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম বা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম।এই কার্নেলের উপর নির্ভর করে কিছু প্রধান প্রধান অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। যাদেরকে আমরা লিনাক্স ডিস্ট্রো হিসেবে চিনি। বর্তমানে ১ হাজারের থেকেও বেশি লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন প্রচলিত আছে। তবে এদের মধ্যে কিছু কিছু আছে যেগুলো রুট ডিস্ট্রো। পরে সেগুলো থেকে আরও অনেক শাখা তৈরি হয়েছে।

প্যারট সিকিউরিটি অপারেটিং সিস্টেম

প্যারট একটি মনোলেথিক কার্নেল নির্ভর লিনাক্স হ্যাকিং ডিস্ট্রো। একে ফ্রজেনবক্স এবং কালি লিনাক্সের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্যারট একটি ডেবিয়ান নির্ভর লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম। ডেক্সটপ এনভাইরমেন্ট হিসেবে প্যারট MATE এবং KDE ইউজ করে। যা হাইলি কাস্টমাইজেবল, ফ্রেশ এবং লাইটওয়েট।

প্যারট ক্লাউড ফ্রেন্ডলি এবং অনেক ফাস্ট পারফর্ম করে। যে কারনে যে কোন কনফিগারেশনে স্মুথভাবে চলে। একে অনেকেই প্যারটসেক নামে ডাকে। মূলত সার্ভার রিলেটেড বিভিন্ন সমস্যায় প্যারট অনেক ভালো কাজ করে। এছাড়া ফরেনসিক টেস্ট, ইথিক্যাল হ্যাকিং, পেনেট্রেশন টেস্টিং, ক্রিপ্টোগ্রাফি এবং আইডেন্টিটি হাইড সহ হ্যাকিং রিলেটেড অনেক কাজ করা যায়। প্যারটের টুল গুলো পোর্টেবল এবং ক্রস প্ল্যাটফর্ম সাপোর্টেড। অর্থাৎ তাদের টুলগুলো লিনাক্স বাদেও উইন্ডোজ এবং ম্যাকে ইউজ করা যায়। প্যারট ডাউনলোড করার জন্য তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে বা Download ParrotOS Security Edition (parrotsec.org) এখান থেকে ডিরেক্ট সার্ভার বা টরেন্ট ইউজ করে ডাউনলোড করতে পারবেন।

ব্যাকবক্স

ব্যাকবক্স একটি পেনেট্রেশন টেস্টিং, সিকিরিটি অ্যানালিস্ট, ইনফরমেশন অ্যানালিস্ট এবং নেটওয়ার্ক এনালাইসিস অপারেটিং সিস্টেম। উবান্টু ভিত্তিক ব্যাকবক্স ওএস সিকিউরিটি নিয়ে গবেষণা করার জন্য উপযুক্ত একটি সিস্টেম। এতে মিনিমাল ডিজাইন ইউজ করা হয়েছে যাতে নতুন রিসার্চার কাজ করে কমফোরট ফিল করে। এটি একটি স্টাবল এবং লাইটওয়েট অপারেটিং সিস্টেম যা স্মুথলি সব কনফিগারেশনে চলে। ব্যাকবক্স দিয়ে অন্যান্য সিকিউরিটি অ্যানালাইসিস সহ ডাটা এবং অ্যাপ্লিকেশন অ্যানালাইসিস করা যায়।

তাদের পুরো সিস্টেম এবং টুলগুলো নিয়মিত আপডেট করা হয়। এতে সবসময় ফ্রেশ এবং লেটেস্ট পারফর্মেন্স পাওয়া যায়। তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আইএসও ফাইল সরাসরি ডাউনলোড করে নিজের সিস্টেমে ইন্সটল দিতে পারবেন। মনে রাখবেন ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করার আগে ডোনেশন বক্সে “5” এর জায়গায় “0” দিয়ে ডাউনলোড লিংকে ক্লিক করবেন।

কালি লিনাক্স

কালি লিনাক্স বিশ্বে ব্যবহৃত সব থেকে জনপ্রিয় হ্যাকিং লিনাক্স ডিস্ট্রো। পূর্বে এর নাম ছিল ব্যাকট্র্যাক যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হলো অফেনসিভ সিকিউরিটি লিমিটেড। ব্যাকট্র্যাকের ৫ টি সফল ভার্সন রিলিজ করার পর তারা কালি লিনাক্স নামক একটি স্বতন্ত্র ডিস্ট্রো রিলিজ করে। মূলত কালি তৈরি করার পেছনে প্রধান কারন হলো একটি শক্তিশালী ফরেনসিক অর পেনেট্রেশন টেস্টিং অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা। কালি একটি ডেবিয়ান ভিত্তিক লিনাক্স ডিস্ট্রো। বর্তমানে কালিতে মোট ৬০০+ হ্যাকিং টুল প্রি-ইন্সটল থাকে যেখানে প্রায় সব ধরনের প্রয়োজনীয় টুল পাওয়া যায়। এছাড়া ওপেনসোর্স হওয়ায় কাস্টম টুল ডেভেলপ করেও কাজ করা যায়।

কালি লিনাক্স একটি ট্রাস্টেড ও হেল্পফুল কমিউনিটি তৈরি করে ফেলেছে। যার ফলে যে কোন সমস্যার সমাধান সহজে পাওয়া যায়। এছাড়া অন্যান্য বিষয় যেমন ইউজার এক্সপেরিমেন্ট, ইউআই, হার্ডওয়্যার সাপোর্ট সহ অন্যান্য বিষয়ের কারনে কালি এতো জনপ্রিয়। তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে আইএসও ফাইল সহ ভার্চুয়াল বক্স এবং পেনড্রাইভে ইন্সটল দিয়ে কালি ইউজ করার সকল ফাইল আছে। যে কারনে অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম কালি লিনাক্সের কাছে হাড় মানে।

ব্ল্যাকআর্চ লিনাক্স

ব্ল্যাকআর্চ একটি আর্চ লিনাক্স ভিত্তিক হ্যাকিং ডেডিকেটেড অপারেটিং সিস্টেম। কালি লিনাক্সের প্রতিদ্বন্দ্বী ব্ল্যাকআর্চ লিনাক্সে মোট ২৬২৪ টি প্রি-ইন্সটলড হ্যাকিং টুল আছে। সংখ্যার হিসেবে এটা হিউজ এবং ব্ল্যাকআর্চ এই কারনেই অন্যান্য ওএস গুলো থেকে আলাদা। ব্ল্যাকআর্চ একটি হেভিওয়েট লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম। এর মূল আইএসও ফাইলের সাইজ ১৫ জিবির মত। যদিও এর ভার্চুয়াল বক্স এবং নেটইন্সটলার পাওয়া যায়। তারপরেও দূর্বল বা পুড়নো কনফিগারেশনের সিস্টেমে ব্ল্যাকআর্চ অত ভালো চলে না। এছাড়া ইউজার ইন্টারফেসের দিক দিয়ে এটি অনেক কুল কিন্তু এটি নতুন ইউজারদের জন্য না। অপেক্ষাকৃত ভালো এক্সপেরিয়ান্স আছে এমন ইউজারের জন্য এটি উপযুক্ত। বিশেষ করে এন্টারপ্রাইজ লেভেলের জন্য ব্ল্যাকআর্চ অনেক ভালো।

সাইবর্গ হক লিনাক্স

সাইবর্গ হক লিনাক্স উবুন্টুর উপর নির্ভর করে তৈরি করা। ডেভেলপ করেছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। ২০১৫ সালের দিকে রিলিজ করা সাইবর্গ হক অতি দ্রুত জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। সাম্প্রতিক হিসেবে তাদের বর্তমান ৭৫০+ হ্যাকিং রিলেটেড টুল আছে। সাইবর্গ হক দিয়ে পেনেট্রেশন টেস্টিং, ডিজিটাল ফরেনসিক, নেটওয়ার্ক মেইনটেনেন্স, মোবাইল সিকিউরিটি এবং ওয়্যারলেস বিষয়ে কাজ করা যায়। শুরুর দিকে তাদের নিজস্ব কোন রিপোজিটরি ছিল না যে কারনে টুল ইন্সটল এবং কাজ করতে সমস্যা হতো।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তারা রিপোজিটরি তৈরি করে ফেলেছে। বর্তমানে সকল প্রয়োজনীয় টুল তাদের রিপোজিটরিতে পাওয়া যায়। সাইবর্গ হক ইউজ করে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ট্রেসিং করা সহ অন্যান্য রিলেটেড হ্যাকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে মূল আইএসও ফাইল ছাড়াও লাইভ সিডি এবং ভার্চুয়াল বক্সে ইন্সটল দেওয়ার জন্য ফাইল পাওয়া যায়।

পেন্টো লিনাক্স

পেন্টো একটি গেন্টো (Gentoo) ভিত্তিক সিকিউরিটি অ্যানালাইসড লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম। বিশেষ করে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক হ্যাকিং রিলেটেড বিষয়ের জন্য পেন্টো উপযুক্ত একটি ডিস্ট্রো। এর মূল ফিচার গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কাস্টমাইজেবল কার্নেল। এছাড়া এর মূল কার্নেলে ওয়াইফাই হ্যাকিং বিষয়ক প্যাকেজ গুলো ইন্সটল করা আছে।

এটি ওপেনসোর্স এবং যে কোন ধরনের কাস্টমাইজেশন সাপোর্ট করে। এটি এখন পর্যন্ত ডেভেলপমেন্ট মুডে আছে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত পেন্টো লিনাক্সের কোন স্টাবল ভার্সন রিলিজ হয়নি। তাদের মূল আইএসও ফাইল ডাউনলোড করার জন্য অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে টরেন্ট এবং মিরর লিংক আছে। যে কোন একটা লিংক ইউজ করে মূল ফাইল ডাউনলোড করে সিস্টেমে ইন্সটল দিতে পারবেন। তবে ডাউনলোড করার আগে অবশ্যই উপরে দেয়া ডিসক্লেইমারটি দেখে নেবেন।

হ্যাকিং বিষয়ে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মানুষ যারা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত তাদের ইন্টারেস্ট আছে। আজকাল হ্যাকিং একটি স্মার্ট ক্যারিয়ার হিসেবে গড়ে উঠছে। হ্যাকিং শেখার ইচ্ছা থাকলে উপরে বর্ণিত যে কোন একটি লিনাক্স ডিস্ট্রো ইন্সটল দিয়ে শেখা শুরু করতে পারেন। আশাকরি উপরে বর্ণিত ডিটেইলস গুলো আপনাকে পারফেক্ট অপারেটিং সিস্টেম সিলেক্ট করতে সহায়তা করবে। আপনার মতামত অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top