Table of Contents
বাংলাদেশের শীর্ষ ১০টি গ্রুপ অফ কোম্পানি
বাংলাদেশ পৃথীবির ছোট সবুজ-শ্যামলে ভরা সুন্দর একটি দেশ। বাংলাদেশ আয়তনের দিক থেকে ছোট হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে কিন্তু ছোট নয়, পৃথীবির অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে এবং এই বিশাল পরিমাণ জনসংখ্যাকে কিভাবে জনসম্পদে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে সরকারী সংস্থা এবং পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা।
এত বৃহত্তম জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া সরকারের পক্ষে একা কোন দিন সম্ভব নয়, আর এখানেই বেসরকারি সংস্থাগুলোর অবদান। এক সময় বাংলাদেশ শুধুমাত্র কৃষি নির্ভর ছিলো, কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ শুধু কৃষি নির্ভর নয়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অসংখ্য বেসরকারী কোম্পানি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের এই বেসরকারি কোম্পানি গুলো এক দিকে যেমন দেশের জনগণের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, অপরদিকে দেশের জনগণের পণ্যর চাহিদা মিটাচ্ছে। এই বেসরকারি কোম্পানি গুলোর প্রসার শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, দেশের জনগণের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশের মাটিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিদেশের এমন অনেক দেশ রয়েছে যারা বাংলাদেশের পণ্যর ওপর পুরোপুরি ভাবে নির্ভরশীল।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের ৫ টি জনপ্রিয় ই-কমার্স কোম্পানী
পৃথীবির অনান্যে দেশগুলো ইতিমধ্যে উন্নতির শিখরে পৌছে গেছে, বাংলাদেশ আগের তুলনায় বহগুণ উন্নত হলেও ঔ-সকল উন্নত দেশের কাতারে এখনো পৌঁছাতে পারেনি। প্রতিযোগিতার এই সময়ে কোন দেশই বসে নেই। প্রত্যেকটি দেশ কীভাবে তাঁদের উন্নয়ন ঘটাবে সেই লক্ষ্য কে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাচ্ছে। যেই দেশে ব্যাবসা-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যত বাড়বে সেই দেশ ততই দ্রুত এগিয়ে যাবে। একটি দেশের উন্নয়নের পেছনে ব্যাবসা-প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরসীম।
ব্যাবসা-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, কর্মসংস্থান বাড়বে বেকাড়ত্ব দূর হবে, দেশের জনগণের চাহিদা পূরণ হবে যার ফলে আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে এবং একই সাথে রপ্তানির হার বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা উর্পাজন বেড়ে যাবে । এভাবেই একটি ব্যাবসা-প্রতিষ্ঠান দেশের উন্নয়নের পেছনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই এখন প্রত্যেকটি দেশের সরকার প্রধান থেকে চাকরীর থেকে ব্যাবসার ওপর গুরুত্ব বেশি দিচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে? বাংলাদেশেও গড়ে উঠেছে এই রকম ব্যাবসা-প্রতিষ্ঠান । অসংখ্য কর্মীর দিন-রাত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত বড় হচ্ছে এবং সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশের মোট জিডিপি। তো যেই, কোম্পানিগুলোর অবদানের জন্য বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে, আজকে কথা বলবো তাঁদের নিয়ে।
বাংলাদেশের সেরা ১০ টি কোম্পানির তালিকা
[ বিদ্রঃ সম্পদ বা জনবলের দিক থেকে কোন কোম্পানি বড় তা সিরিয়াল ভাবে এখানে লেখা হয়নি, এখানে শুধু বাংলাদেশের শীর্ঘ ১০ টি প্রতিষ্ঠান কে তুলে ধরা হয়েছে ]
বসুন্ধরা গ্রুপ
আজ থেকে প্রায় ৩৩ বছর আগে (দেশ ও মানুষের জন্য ) এই স্লোগানের মাধ্যমে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বসুন্ধরা গ্রুপ। সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে ক্ষুদ্র এই কোম্পানিটি এখন বাংলাদেশের বৃহত্তম কোম্পানিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে বসুন্ধরা গ্রুপে কাজ করছে প্রায় ৫৬, ০০০ কর্মী, কিন্তু ধারণা করা যায় প্রকৃত সংখ্যা এর থেকেও বেশি। বসুন্ধরা গ্রুপের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। বসুন্ধরা গ্রুপ সিমেন্ট, গ্যাস, সার্ভিস, মিডিয়া, খেলাধুলা, ইস্পাত, ফুড, চিকিৎসা সহ আরো অসংখ্য খাতে ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছে।
যমুনা গ্রুপ
যমুনা গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তর একটি কোম্পানি। ১৯৭৪ সালে তাঁদের পথযাত্রা শুরু হয় এবং আজ ৪৬ বছর পর তাঁরা বাংলাদেশের বৃহত্তম কোম্পানি গুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। যমুনা গ্রুপের রয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শপিংমল (যমুনা ফিউচার পার্ক) এবং এটি শুধু বাংলাদেশের সব থেকে বড় শপিংমল নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে বড় শপিং মল এটি।যমুনা গ্রুপের ব্যবসার খাতগুলো হলো: টিভি, মিডিয়া, ইলেকট্রনিক্স, গ্যাস, স্পিনিং মিলস ,আবাসন, বস্ত্র, রাসায়নিক, নির্মাণ, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রিন্ট ইত্যাদি। যমুনা গ্রুপের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৩০ কোটি ডলার।
বেক্সিমকো গ্রুপ
বেক্সিমকো গ্রুপ মূলত বাংলাদেশের এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এবং স্টক এক্সচেঞ্জের বাজারে রাজত্ব করে আসছে। বেক্সিমকো গ্রুপে প্রায় ৬৫,০০০ কর্মী নিয়োজিত আছেন। বর্তমানে বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার। পোশাক, ইঞ্জিনিয়ারিং, অনলাইন, ফুড, র্ফামা, টেলিভিশন, বিনিয়োগ, ব্যাকিং সহ আরো নানা খাতে বেক্সিমকো গ্রুপ ব্যাবসা করে আসছে। বাংলাদেশের অন্যতম টেলিভিশন চ্যানেল (ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন) বেক্সিমকো গ্রুপের।
আকিজ গ্রুপ
আকিজ গ্রুপ বাংলাদেশের অনেক পুরাতন কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৪০ সালে শুরু হওয়া এই কোম্পানির বয়স এখন ৮০ বছর। প্রায় ৭০,০০০ কর্মী নিয়োজিত আছে আকিজ গ্রুপে। আকিজ গ্রুপের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১.৪৭ বিলিয়ন ডলার। আকিজ গ্রুপ মূলত জুট, টেক্সটাইল, সিরামিক, ফুড, তামাক, ফার্মাসিউটিক্যালস সহ আরো অন্যন্যে সেক্টরে ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছে। আকিজ গ্রুপের পথযাত্রা শুরু হয়েছিল পাট শিল্পের মাধ্যমে।
স্কয়ার
বাংলাদেশে স্কয়ার কোম্পানি খুবই পরিচিত। স্কয়ার মূলত ঔষধ শিল্পের জন্য খুবই পরিচিতি লাভ করেছে। স্কয়ারের ঔষধ বাংলাদেশের বাইরেও খুবই জনপ্রিয়। ঔষধ, খাদ্য, পোশাক, মিডিয়া ইত্যাদি খাতে স্কয়ার ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছে। স্কয়ার কোম্পানির বয়স ৬২ বছর। ১৯৫৮ সালে স্কয়ারের পথযাত্রা শুরু হয়। (মাছরাঙ্গা টিভি) স্কয়ার কোম্পানির।
মেঘনা গ্রুপ
মেঘনা গ্রুপ বাংলাদেশের আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান। মেঘনা গ্রুপের মোট সম্পদের পরিমান ২.৫ বিলিয়ন ডলার। প্রায় ৩২,০০০ কর্মী মেঘনা গ্রুপে কর্মগত আছেন। সিমেন্ট, কাগজ, বীমা, রাসায়নিক, সিকিউরিটি, মিডিয়া, তেল, চিনি , দুধ ইত্যাদি খাতে মেঘনা গ্রুপ সেবা দিয়ে আসছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ
বাংলাদেশে আর এফ এলের পণ্য কেনেনি অথবা আরএফএল কোম্পানি চেনে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের বিশাল কর্ম সংস্থান তৈরি করেছে আর এফ এল গ্রুপ। আজ থেকে ৩৯ বছর আগে ১৯৮১ সালের ১৭ মার্চ শুরু হয় আর এফ এল গ্রুপের পথযাত্রা। এফ এল গ্রুপ দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর পরিমাণ পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছে। খাদ্য, প্লাস্টিক, কৃষি, মিডিয়া, ইলেকট্রনিক্স, ঔষধ, গামের্ন্ট সহ আরো নানা ধরণের খাতে প্রাণ আর এফ এল গ্রুপ ব্যাবসা পরিচালা করছে, তবে আর এফ এলের প্লাস্টিক পণ্য সব থেকে বেশি জনপ্রিয়।
আবুল খায়ের গ্রুপ
অতীতে আবুল খায়ের গ্রুপের স্টিল খুবই জনপ্রিয় ছিলো, এমনকি সবার মুখে মুখে শোনা যেত আবুল খায়ের টিনের নাম। ৬৭ বছর আগে ১৯৫৩ সালে আবুল খায়ের গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। স্টিল, সিরামিকস, তামাক, সিমেন্ট মূলত এই চারটি খাতের পাশাপাশি আরো নানা রকম খাতে ব্যাবসা পরিচালণা করছে।
এসিআই লিমিটেড
বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান এসিআই লিমিটেড। এসিআই লিমিটেডের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২৩৮ মিলিয়ন ডলার। আজ থেকে ২৮ বছর আগে ১৯৯২ সালে এসিআই লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। রাসায়নিক, কৃষি, মোটর সাইকেল, ভোগ্য পণ্য, খাদ্য, পরিবহন, ইলেকট্রনিক্স, যোগাযোগ সহ আরো বিভিন্ন সেক্টরে এসিআই লিমিটেড সেবা দিচ্ছে।
পারটেক্স গ্রুপ
বাংলাদেশে পারটেক্স গ্রুপের পণ্যগুলো খুবই জনপ্রিয়। প্রায় ৫৫,০০০ কর্মী নিয়োজিত আছে পারটেক্স গ্রুপে। ৬১ বছর আগে ১৯৫৯ সালে পারটেক্স গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়। পারটেক্স গ্রুপের বর্তমানে মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭.২ বিলিয়ন ডলার। প্লাস্টিক, ফুড, স্টীল, আবাসন, শীপ, পাট, পাওয়ার , কাগজ, কৃষি, আইটি, আবাসবপত্র, টেক্সটাইল ইত্যাদি খাতে ব্যাবসা পরিচালনা করছে পারটেক্স গ্রুপ।
তো এই ছিলো বাংলাদেশের সেরা ১০ টি কোম্পানি। এই কোম্পানি গুলোর বাইরেও আরো অসংখ্য ভালো মানের কোম্পানি রয়েছে, যা হয়তো আজকের লিস্ট থেকে বাদ পড়েছে, তবে খুব শিঘ্রই এইরকম আরো একটি লিস্ট প্রকাশ হবে ইনশাআল্লাহ। আশা করি বাংলাদেশের সেরা ১০ টি কোম্পানি সম্পর্কে অনেক ভালো ধারণা পেয়েছেন। আজ আর না, (কথা হবে অনুভবে) আবার অন্য আরেকটি পোস্টে।
আমি নিজেকে পরিবর্তন করতে চাই
আমি কি ভাবে আপনাদের কোম্পানিতে কাজ পাবো?