SEO র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর -SEO Ranking Factors on Google

আপনি জানেন কি – গুগলে প্রতিদিন প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন সার্চ হয়? অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে গুগলে। কিন্তু গুগল কীভাবে ঠিক করে কে থাকবে প্রথমে আর কে হারিয়ে যাবে দ্বিতীয় বা পরের কোন পাতার অন্ধকারে? জ্বি, ঠিক এখানেই আসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় – SEO র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর । ইন্টারনেটে হাজারো ভালো কনটেন্ট থাকা সত্ত্বেও, যারা সঠিকভাবে এই র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টরগুলোকে কাজে লাগাতে পারে, তারাই উঠে আসে গুগলের সেরা দশে।

২০১০ সালের দিকে SEO মানে শুধু কীওয়ার্ড ভরা কনটেন্ট আর ব্যাকলিংক ছিল। কিন্তু এখন গুগলের এলগোরিদম এতটাই উন্নত হয়েছে যে, প্রায় ২০০টিরও বেশি SEO র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর কাজ করে একসাথে। এই ফ্যাক্টরগুলো শুধু সার্চ রেজাল্টে জায়গা পাওয়ার জন্য নয়, বরং ইউজারদের আরও ভালো এক্সপেরিয়েন্স দেয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং বা ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করে থাকেন, তাহলে এই ফ্যাক্টরগুলো জানা ও প্রয়োগ করা আপনার জন্য অপরিহার্য।

Table of Contents

SEO র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

SEO র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর হলো সেইসব উপাদান বা নির্দেশক যা গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন নির্ধারণ করে কোন ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেজটি সার্চ রেজাল্টে কতটা উপরের দিকে থাকবে। এই ফ্যাক্টরগুলো মূলত সার্চ ইঞ্জিনের অ্যালগরিদম দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং এগুলোর মধ্যে রয়েছে কনটেন্টের মান, কীওয়ার্ড ব্যবহার, ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড, মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইন, ব্যাকলিংক, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স, টাইটেল ট্যাগ ও মেটা ডিসক্রিপশন ইত্যাদি। এসব ফ্যাক্টর একত্রে কাজ করে সার্চ ইঞ্জিনকে বোঝাতে সাহায্য করে যে, কোন কনটেন্টটি ব্যবহারকারীর কুয়েরির জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টরগুলো গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলোই নির্ধারণ করে একটি ওয়েবসাইট কতটা ভিজিটর পাবে। বেশিরভাগ মানুষ গুগলে কিছু সার্চ করার সময় প্রথম পেজের ৩-৫টি রেজাল্টের মধ্য থেকেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য বেছে নেয়। তাই, যদি আপনার ওয়েবসাইট এই ফ্যাক্টরগুলোর উপর ভিত্তি করে ভালোভাবে অপটিমাইজ করা থাকে, তাহলে তা প্রথম পেজে র‍্যাঙ্ক করতে পারবে এবং অর্গানিক ভিজিটর বাড়বে। এটি শুধু ট্রাফিক বৃদ্ধিতেই নয়, বরং ব্যবসার ব্র্যান্ড ভ্যালু, কনভার্সন রেট ও আস্থাও বাড়ায়। এজন্য SEO র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর জানা এবং কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একটি অপরিহার্য অংশ।

কনটেন্ট কোয়ালিটি: র‍্যাঙ্কিংয়ের প্রথম ধাপ

ইউনিক ও ইনফরমেটিভ কনটেন্টের গুরুত্ব

SEO-তে সফলতার অন্যতম মূল চাবিকাঠি হলো ইউনিক ও ইনফরমেটিভ কনটেন্ট। যখন আপনি এমন কনটেন্ট তৈরি করেন যা আগে কেউ লিখেনি বা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উপস্থাপন করেন, তখন সেটি গুগল এবং ব্যবহারকারীদের কাছে অধিক মূল্যবান হয়ে ওঠে। কপি-পেস্ট করা বা সাধারণ তথ্যভিত্তিক কনটেন্ট আজকাল খুব সহজে র‍্যাঙ্ক করে না, কারণ সার্চ ইঞ্জিন এখন বুঝতে পারে কোন কনটেন্ট আসলেই ইউজারের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। তাই এমন কনটেন্ট তৈরি করতে হবে যা সমস্যার সমাধান দেয়, বিস্তারিত তথ্য দেয় এবং পাঠককে তার প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা করে। ইউনিকনেস কেবল প্ল্যাজিয়ারিজম এড়িয়ে চলার জন্যই নয়, বরং এটি কনটেন্টের আসল ভ্যালু তুলে ধরে এবং আপনাকে আপনার নীচে একজন অথরিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে।

কীওয়ার্ড রিসার্চ ও ব্যবহার কৌশল

সঠিক কীওয়ার্ড নির্বাচন ও তা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কনটেন্টে ব্যবহার করাই হলো সফল SEO-র মেরুদণ্ড। কীওয়ার্ড রিসার্চের মাধ্যমে আপনি জানতে পারেন মানুষ কী ধরনের শব্দ বা বাক্যাংশ ব্যবহার করে আপনার টপিক সম্পর্কে সার্চ করছে। এরপর সেই কীওয়ার্ডগুলো কৌশলগতভাবে টাইটেল, সাবহেডিং, প্রথম প্যারাগ্রাফ, URL, মেটা ডিসক্রিপশন এবং মূল কনটেন্টে ব্যবহার করলে সার্চ ইঞ্জিন বুঝতে পারে যে আপনি ঐ বিষয়ে কথা বলছেন। তবে শুধু কীওয়ার্ড ঠেসে ভরিয়ে দিলেই হবে না – এতে করে গুগল কনটেন্টকে স্প্যাম হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। তাই কীওয়ার্ডের প্রাকৃতিক ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স নষ্ট না করে বরং উন্নত করে।

E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) এর প্রভাব

E-E-A-T হলো এমন একটি ধারণা যা গুগলের কোয়ালিটি র‍্যাঙ্কিং গাইডলাইন অনুযায়ী একটি ওয়েবসাইট বা কনটেন্টের মান যাচাইয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই চারটি দিক – অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, কর্তৃত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা – একত্রে নির্ধারণ করে আপনার কনটেন্ট কতটা গ্রহণযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্য বিষয়ক কনটেন্ট যদি একজন চিকিৎসকের দ্বারা লেখা হয়, তাহলে সেটির এক্সপার্টাইজ ও অথরিটিভ ভ্যালু বেশি থাকবে। আবার, নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু লিখলে সেটি “Experience” হিসেবে বিবেচিত হয়। পাশাপাশি, পরিচিত সাইট থেকে ব্যাকলিংক পাওয়া এবং সঠিক রেফারেন্স উল্লেখ করাও ট্রাস্ট তৈরি করে। E-E-A-T ভালোভাবে মেইনটেইন করা মানে আপনার কনটেন্ট শুধু র‍্যাঙ্কই করবে না, বরং পাঠকদের আস্থা অর্জন করবে – যা দীর্ঘমেয়াদে SEO-র সবচেয়ে বড় শক্তি।

টেকনিক্যাল SEO

ওয়েবসাইট স্পিড ও লোডিং টাইম

ওয়েবসাইটের স্পিড বা লোডিং টাইম হলো টেকনিক্যাল SEO-র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এটি সরাসরি ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ও সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাঙ্কিংয়ের ওপর প্রভাব ফেলে। যদি একটি পেজ লোড হতে বেশি সময় নেয়, তাহলে ব্যবহারকারীরা অপেক্ষা না করেই সাইট ত্যাগ করে দেয়, যার ফলে বাউন্স রেট বেড়ে যায় এবং গুগল ধরে নেয় যে কনটেন্টটি কম প্রাসঙ্গিক। দ্রুত লোডিং ওয়েবসাইট ইউজারদের ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং কনভার্সন রেটও বাড়ায়। এজন্য ইমেজ অপটিমাইজেশন, কোড মিনিফিকেশন, ক্যাশিং এবং রেসপন্সিভ ডিজাইনসহ বিভিন্ন টেকনিক ব্যবহার করে ওয়েবসাইটকে ফাস্ট রাখা জরুরি। গুগল পেজ স্পিড ইনসাইটস বা GTmetrix-এর মতো টুল ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার ওয়েবসাইটের স্পিড বিশ্লেষণ করে উন্নত করতে পারেন।

মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইন

বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী মোবাইল ডিভাইস থেকে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে, তাই মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইন SEO-এর জন্য অপরিহার্য। গুগল এখন “Mobile-First Indexing” ব্যবহার করে, অর্থাৎ মোবাইল ভার্সনের কনটেন্টকে প্রাধান্য দিয়ে র‍্যাঙ্কিং নির্ধারণ করে। যদি আপনার ওয়েবসাইট মোবাইলে ঠিকভাবে লোড না হয় বা ইউজার ইন্টারফেস জটিল হয়, তবে তা র‍্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মোবাইল ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট মানে হলো রেসপন্সিভ লেআউট, সহজ নেভিগেশন, বড় টেক্সট ও বোতাম, এবং দ্রুত লোডিং – যা মোবাইল ইউজারদের জন্য ঝামেলাহীন অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে। তাই ডিজাইন করার সময় প্রথম থেকেই মোবাইলকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা উচিত।

HTTPS ও সিকিউরিটি

ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা, বিশেষ করে HTTPS ব্যবহার, টেকনিক্যাল SEO-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। HTTPS নিশ্চিত করে যে ওয়েবসাইট ও ব্যবহারকারীর মাঝে আদান-প্রদানের ডেটা এনক্রিপ্টেড, অর্থাৎ নিরাপদ। গুগল পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে HTTPS সাইটগুলোকে র‍্যাঙ্কিংয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, কারণ এগুলো ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এছাড়াও, ব্যবহারকারীরা নিরাপদ সাইটে ব্রাউজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে – যা ট্রাস্ট বিল্ড করতে সাহায্য করে। একটি SSL সার্টিফিকেট ইনস্টল করে আপনি সহজেই আপনার ওয়েবসাইট HTTPS করতে পারেন এবং এটি SEO সহ সাইটের সামগ্রিক বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ব্যাকলিংক এবং অথরিটি বিল্ডিং

কোয়ালিটি ব্যাকলিংকের গুরুত্ব

কোয়ালিটি ব্যাকলিংক হলো এমন লিংক যা বিশ্বস্ত, অথরিটেটিভ ও প্রাসঙ্গিক ওয়েবসাইট থেকে আপনার ওয়েবসাইটে আসে। এই ধরনের ব্যাকলিংক সার্চ ইঞ্জিনকে বুঝিয়ে দেয় যে আপনার কনটেন্ট নির্ভরযোগ্য এবং তা অন্যরাও রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করছে। যত বেশি উচ্চমানের ওয়েবসাইট আপনার কনটেন্টের দিকে ইঙ্গিত করে, গুগল তত বেশি আপনার পেজকে ভ্যালু দেয় এবং র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি ঘটায়। তবে শুধু লিংকের সংখ্যা নয়, বরং কোথা থেকে লিংক আসছে এবং কতটা প্রাসঙ্গিক তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, আপনার কনটেন্ট যদি SEO নিয়ে হয়, তাহলে একটি ডিজিটাল মার্কেটিং ব্লগ থেকে আসা ব্যাকলিংক সেটির প্রাসঙ্গিকতা এবং মান অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।

স্প্যামি লিংক থেকে সতর্কতা

ব্যাকলিংক পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই শর্টকাট নিতে গিয়ে অপ্রাসঙ্গিক বা স্প্যামি ওয়েবসাইট থেকে লিংক নেয়, যা SEO-তে উল্টো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গুগলের অ্যালগরিদম এখন অনেক উন্নত; এটি সহজেই বুঝতে পারে কোন লিংক প্রকৃত অথরিটিভ সোর্স থেকে এসেছে আর কোনটি কৃত্রিম বা লিংক ফার্ম থেকে। যদি বেশি স্প্যামি লিংক আপনার ওয়েবসাইটে দেখা যায়, তাহলে গুগল পেনাল্টি দিতে পারে এবং র‍্যাঙ্ক কমে যেতে পারে। এজন্য নিয়মিত ব্যাকলিংক প্রোফাইল চেক করা, Google Search Console ব্যবহার করে সন্দেহজনক লিংকগুলো disavow করা এবং অর্গানিক ও প্রাকৃতিকভাবে ব্যাকলিংক তৈরিতে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

সোশ্যাল শেয়ার এবং ব্র্যান্ড অথরিটি

যদিও সোশ্যাল শেয়ার সরাসরি র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর নয়, তবে এটি পরোক্ষভাবে SEO এবং ব্র্যান্ড অথরিটি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন কনটেন্ট বেশি বেশি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হয়, তখন তা আরও মানুষের কাছে পৌঁছায়, লিংক পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, এবং ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, একটি ব্র্যান্ড যদি সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকে এবং ব্যবহারকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে, তাহলে সেই ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে। এটি গুগলের চোখেও পজিটিভ সিগন্যাল পাঠায় যে আপনি একটি বিশ্বস্ত সোর্স। ফলে সোশ্যাল শেয়ার কেবল প্রচার নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে ব্র্যান্ড অথরিটি ও SEO উন্নয়নে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX) ও ইউজার বিহেভিয়ার

একটি ওয়েবসাইট বা অ্যাপের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX) ব্যবহারকারীদের মনের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। সহজ নেভিগেশন, দ্রুত লোডিং টাইম, রেসপন্সিভ ডিজাইন এবং ভিজ্যুয়াল আরামদায়কতা একজন ব্যবহারকারীকে বেশি সময় ধরে ওয়েবসাইটে রাখতে সাহায্য করে। ইউজার বিহেভিয়ার বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়, কোন পেজে তারা সময় কাটায়, কোথায় ক্লিক করে, বা কোন অংশে আগ্রহ হারায়। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে UX উন্নত করে আরও কার্যকর ডিজাইন তৈরি করা যায়, যা রূপান্তরের হার বাড়ায়।

বাউন্স রেট ও ড্যুয়েল টাইম

বাউন্স রেট হলো সেই হার, যেখানে একজন ব্যবহারকারী ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর কোনো ইন্টারঅ্যাকশন না করেই বেরিয়ে যায়। এটি যত বেশি হয়, ততই ইঙ্গিত দেয় যে সাইটের কনটেন্ট বা ডিজাইন ইউজারের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়। অন্যদিকে, ড্যুয়েল টাইম বা গড় অবস্থানকাল দেখায় একজন ইউজার একটি পেজে কতক্ষণ অবস্থান করছে। এই দুটি মেট্রিকের উন্নয়ন মানে ইউজার ওয়েবসাইটে আগ্রহ পাচ্ছে ও যুক্ত থাকছে, যা সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাঙ্কিং বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সহায়ক।

ক্লিক-থ্রু রেট (CTR) বৃদ্ধির কৌশল

CTR নির্দেশ করে কত শতাংশ ইউজার কোনো লিঙ্ক বা বিজ্ঞাপন দেখে তাতে ক্লিক করছে। এটি বাড়াতে হলে আকর্ষণীয় হেডলাইন, প্রাসঙ্গিক মেটা ডেসক্রিপশন, ও ভালো ভিজ্যুয়াল এলিমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, কল-টু-অ্যাকশন (CTA) স্পষ্ট ও কার্যকরভাবে উপস্থাপন করা উচিত। সার্চ রেজাল্টে চোখে পড়ার মতো টাইটেল এবং রিচ স্নিপেট ব্যবহার করেও CTR বাড়ানো সম্ভব।

কনটেন্ট স্ট্রাকচার ও রিডেবিলিটি

একটি কনটেন্টের গঠন এবং পাঠযোগ্যতা (রিডেবিলিটি) ইউজারের মনোযোগ ধরে রাখার অন্যতম চাবিকাঠি। পরিষ্কার সাবহেডিং, ছোট অনুচ্ছেদ, বুলেট পয়েন্ট এবং সঠিক ফন্ট সাইজ ব্যবহার করলে কনটেন্ট সহজে পড়া যায়। SEO-এর জন্য কিওয়ার্ড ব্যবহারে সচেতন থাকতে হবে, তবে অতিরিক্ত না করে প্রাকৃতিকভাবে যুক্ত করা উচিত। সহজ, বোধগম্য ভাষা এবং ভিজ্যুয়াল উপাদান যুক্ত করলে কনটেন্ট আরও বেশি প্রভাব ফেলে।

অন-পেজ SEO ফ্যাক্টর

টাইটেল ট্যাগ, মেটা ডিসক্রিপশন ও হেডিং ট্যাগ

অন-পেজ SEO’র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো টাইটেল ট্যাগ, মেটা ডিসক্রিপশন ও হেডিং ট্যাগ। একটি ভাল টাইটেল ট্যাগ কেবল সার্চ ইঞ্জিনের জন্য নয়, ব্যবহারকারীর জন্যও আকর্ষণীয় হতে হয় – এটি সার্চ রেজাল্টে প্রথম নজরে আসে। মেটা ডিসক্রিপশন সংক্ষেপে পেজের মূল বিষয় ব্যাখ্যা করে এবং ভালোভাবে লেখা হলে এটি CTR বাড়াতে সহায়ক। H1, H2, H3 ইত্যাদি হেডিং ট্যাগ ব্যবহার করে কনটেন্টকে গঠনমূলকভাবে সাজালে সার্চ বটগুলো সহজে বুঝতে পারে কোন অংশটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে কনটেন্টের র‌্যাংকিং সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ইমেজ অপটিমাইজেশন ও অল্ট টেক্সট

ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলোর অপটিমাইজেশন SEO-তে বড় ভূমিকা রাখে। বড় সাইজের ইমেজ ওয়েবসাইট লোডিং টাইম বাড়িয়ে দিতে পারে, যা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ও র‍্যাংকিং – দুইয়ের ওপরই খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই ইমেজ কম্প্রেস করে, ওয়েব-ফ্রেন্ডলি ফরম্যাটে আপলোড করা উচিত। অপরদিকে, অল্ট টেক্সট (alt text) ইমেজের জন্য একটি টেক্সচুয়াল বিবরণ, যা সার্চ ইঞ্জিনকে ছবির বিষয়বস্তু বোঝাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, স্ক্রিন রিডার ব্যবহারকারীদের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, যা এক্ষেত্রে অ্যাক্সেসিবিলিটিও নিশ্চিত করে।

URL স্ট্রাকচার ও ইন্টারনাল লিংকিং

SEO-ফ্রেন্ডলি URL স্ট্রাকচার মানে হচ্ছে সংক্ষিপ্ত, বোধগম্য এবং কিওয়ার্ড-সমৃদ্ধ URL, যা ইউজার ও সার্চ ইঞ্জিন – উভয়ের জন্যই উপকারী। উদাহরণস্বরূপ, yourdomain.com/seo-tips এই ধরণের একটি URL yourdomain.com/page?id=1234 এর তুলনায় অনেক বেশি অর্থবোধক। অন্যদিকে, ইন্টারনাল লিংকিং কৌশল ব্যবহার করে আপনি ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজ একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারেন। এটি কেবল ইউজারকে আরো কনটেন্ট খুঁজে পেতে সাহায্য করে না, বরং সার্চ ইঞ্জিনের জন্যও ওয়েবসাইটের গঠন বুঝতে সুবিধা হয়, যা ইনডেক্সিং ও র‍্যাংকিং বৃদ্ধিতে সহায়ক।

উপসংহার

SEO জগৎটা এখন আর শুধু সার্চ বক্সে কীওয়ার্ড টাইপ করাকে ঘিরে নেই। এটা এখন একটি গভীর, বিশ্লেষণধর্মী এবং ইউজার-কেন্দ্রিক প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে, যেখানে প্রতিটি SEO র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর আপনার ওয়েবসাইটকে সফল বা আবার কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থও করতে পারে। তাই গুগলে টিকে থাকতে হলে শুধু ভালো কনটেন্ট নয়, বরং দরকার প্রতিটি র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান এবং কৌশলগত ব্যবহার রপ্ত করে ফেলা। তাই এখনই সময় আপনার SEO স্ট্র্যাটেজিকে আরো নতুনভাবে গড়ে তুলুন। ধন্যবাদ। 

Leave a Comment