১৬ থেকে ২১ বছর বয়সটাই যেন কেমন, উড়ু উড়ু মন শরীরের রক্ত গরম। এই বয়সে শরীরে পরিবর্তন আসে একই সাথে মনের পরিবর্তন ঘটে। হঠাৎ করেই মন খুঁশি হয়ে যায়, চারপাশে যা ঘটে সবকিছু ভালো লাগে কিন্তু আবার হঠাৎ করেই বিষন্নতায় ভরে ওঠে মন। এই বয়সে কিশোর-কিশোরিরা সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা সময় কাটাতে চায় অথবা পরিবারের সাথে সময় ব্যায় করার বদলে তাঁর প্রিয় বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিশতে চায়।
১৬ থেকে ২১ বছর এই বয়সে নিজেকে অনেক বড় মনে হয়। বাবা মা অভিভাবকদের শাসনে আবদ্ধ হয়ে থাকতে ভালো লাগে না। এই বয়সে মনে হয় নিজেই সব বুঝতে শিখে গেছে, যার কারণেই শাসন ভালো লাগেনা নিজের ইচ্ছা স্বাধীনতায় চলা-ফেরা করতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ভুল পথে পা বাড়িয়ে নিজের ভবিষ্যত জীবনটাকে ধংস করার উপযুক্ত সময় এটাই। এই বয়সটাতে যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করে পরিশ্রম করে যাবে, তাঁরাই ভবিষ্যতে ভালো করতে পারবে। একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে, অতীতে আপনি যা করেছেন তাঁর ফল এখন পাচ্ছেন এবং এখন আপনি যা করবেন তাঁর ফল আগামীতে পাবেন। বুদ্ধিমান ব্যাক্তিদের বোঝার জন্য এই একটা লাইন যথেষ্ট।
কিন্তু এখনকার জেনারেশনের মধ্যে আমরা কি দেখতে পাই? কলেজ পাশ করতে না করতেই মোবাইল,বাইক,ডিএসএলআর এইসব গ্যাজেট কেনা যেন অন্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা হয়ে গেছে। এইসবের পাশাপাশি প্রেম করা, সিগারেট খাওয়া একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে, এই ট্রেন্ডে যে গা ভাসাবে না তাঁদের চোখে এরা স্মার্ট না গ্রামের চাচাতো ভাই,ক্ষ্যত এমনকি বন্ধু লিস্টেও এদের জায়গা দেয় না। শুধু এইটুকুতেই থেমে নেই নিজেকে স্মার্ট প্রমাণ করার জন্য টিকটক ভিডিও করা, ফেসবুক,ইনস্টাগ্রামে #ট্যাগ মেরে পোস্ট করাও মৌলিক চাহিদার মতো হয়ে গেছে।
আরো পড়ুন: ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত হবার উপায়
যারা এমন লাইফস্টাইলে চলাফেরা করে তাঁরা কি একবারো ভবিষ্যত জীবনটার কথা ভাবে না? তাঁরা কি দেখে না তাঁদের সিনিয়রা যারা এমন ভাবে চলতো তাঁদের জীবনের এখন কি অবস্থা?এই বয়সে এনজয় না করলে কবে করবো এটাই তাঁদের যুক্তি। কিন্তু তাঁরা বোঝে না যে, এনজয় করার জন্য ভবিষ্যতে বাকিটা জীবন পড়ে আছে। তাই বলে যে, এখন এনজয় করা যাবে না তা নয়। এই করোনা কালে যেমন সীমিত আকারে লকডাউন চলছে, তেমনি এনজয় করতে হবে সীমিত আকারে সব কিছু ব্যালেন্স করে চলতে হবে। তো এই ব্যালেন্স করা নিয়েই আজকের এই লেখা।
১৬ থেকে ২১ বছর বয়সে কি করা উচিত
✅জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে ফেলা: জীবনের লক্ষ্য এখনি ঠিক করে কাজে নেমে যেতে হবে। যদি লক্ষ্য খুঁজে না পাওয়া যায় তবে, সব ধরণের কাজ ট্রাই করতে হবে ভালো লাগার কিছু একসময় পাওয়া যাবেই।
✅রুটিন মেনে চলা: প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যস করতে হবে এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে হবে তাহলে আমাদের শরীর মন দুটোই ভালো থাকবে।
✅ধৈর্য্য ধরা: যে যত ধৈর্যশীল হবে তাঁর জন্য যে কোন প্রকার সমস্যা মোকাবেলা করা সহজ হয়ে যাবে। তাই ধৈর্য ধারণ করা শিখতে হবে। যেকোন সমস্যায় মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে এবং স্থির হতে হবে।
✅লেখা পড়া: এই বয়সে যাই করা হোক না কেন লেখা পড়া করতেই হবে। কিছু ইউটিউব ভিডিও এবং মোটিভেশন স্পিচ শুনে এখনকার তরুণেরা ভেবেই নিয়েছে লেখাপড়ার দাম নেই, মার্ক জাকারবার্গ, স্টিভ জব্স, বিল গেটর্স তো লেখা পড়া বাদ দিয়েছিলো তাঁরপরেও বড় ব্যাক্তিতে পরিণত হয়েছে। এটা যারা বলে তাঁরা কি স্টিভ জর্ব্স, মার্ক জাকারবার্গের মতো ট্যালেন্টেড? নাকি তাঁদের মতো পরিশ্রমি? আসলে যারা এইসব বলে তাঁরা নিজের সাথেই ফাঁকি বাজি করে, যার ফল অদূর ভবিষ্যতে হারে হারে টের পাবে। তাই এই বয়সে লেখা পড়া ছাড়া গতি নেই, এই সময়ে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ লেখাপড়া করা।
✅ভ্রমণ করা: সৃষ্টিকর্তা এত অপরূপ করে পৃথিবী তৈরি করেছে যেন, মানব জাতি তাঁর নিদর্শন দেখতে পারে। এইজন্যই বলা হয়েছে যখনি সময় পাও ভ্রমণ করো, সৃষ্টিকর্তার নিদর্শন গুলো কাছে থেকে দেখ। ভ্রমণের আনন্দ যে ঘরে বসে থাকে সে বুঝবে না । ১৬ থেকে ২১ বছর বয়স ভ্রমণ শুরু করার জন্য উপযুক্ত সময় কেননা এই সময়ে লেখা পড়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত অবসর সময় থাকে। সময় অতি দ্রুত চলে যায় এই বয়সটা পার হয়ে গেলে সময়ের সাথে সাথে লেখাপড়া শেষ করে চাকরী,বিয়ে,সংসার নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যেতে হবে এইরকম সময় আর ফিরে আসবে না। তাই এই সময়ে যত বেশি পারা যায় ভ্রমণ করা উচিত, কেননা ভ্রমণে শুধু মনের তৃপ্তি হয়না অনেক কিছু শিক্ষা নেয়া যায়।
✅কম্পিউটার শেখা: বর্তমান সময় হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির যুগ, দিনের শুরু থেকে রাত্রি পর্যন্ত আমাদের কাজ কর্মে প্রযুক্তির ছোয়া মিশে আছে, তাই যে যত প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখবে সে ততই প্রতিযোগিতাই এগিয়ে থাকবে। চাকরী হোক বা ব্যবসা কম্পিউটারের ব্যাসিক কাজ গুলো জানতেই হবে। তাই এই বয়সে কম্পিউটার শেখা অত্যতন্ত জরুরী।
✅ফিনানসিয়াল জ্ঞান: ব্যাংকে কিভাবে টাকা লেনদেন করে ব্যাবসায় কিভবে টাকা বিনিয়োগ করে এইসব শিখে নিতে হবে কেননা ভবিষ্যতে এইসব কাজে লাগবে।
✅সিভি বানানো শেখা: এখন থেকেই সিভি বানানো শুরু করতে হবে এবং প্রতি ৬ মাস পর পর সিভি আপডেট করে দেখতে হবে কতটুকু উন্নতি হয়েছে স্কিল কয়টা বেড়েছে।
✅রিলেশনে না জড়ানো: এই বয়সের শতকরা ৮০ শতাংশ প্রেম টেকে না, কিছুদিন পর ব্রেকআপ হয়ে যায় অথবা পরিবারে জেনে গেলে বাজে পরিস্থিতির সম্মুখি হতে হয়। তাছাড়া এইবয়সে নেওয়া ডিসিশন গুলো ভালো হয়না তাই দেখা যায় প্রেম করে বাজে ডিসিশন নিয়ে জীবনটাকে নষ্ট করা হচ্ছে। এইজন্যই এই বয়সে রিলেশন না করাই ভালো, যদি ইতিমধ্যে রিলেশন থাকে তবে তা ব্যালেন্স করা চলা উচিত।
✅ধর্মীয় কাজে লিপ্ত থাকা: যে যেই ধর্মের অনুসারী হোক না কেন ১৬ থেকে ২১ বছর বয়সে ধর্মীয় জ্ঞান বৃদ্ধি এবং ধার্মিক হবার জন্য উপযুক্ত সময়। মুসলিম হয়ে থাকলে এই বয়সের মধ্যেই অতন্ত ৪০ দিনের ৩ টা চিল্লা দেওয়া উচিত কেননা লেখাপড়া শেষে যখন প্রফেশনাল জীবনে পা রাখা হবে তখন এত পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে না তাই এটাই সঠিক সময়।
✅নতুন ভাষা শেখা: চাকরী হোক কিংবা ব্যাবসা কর্মক্ষেত্রে ইংরেজী ছাড়া বেশি দূর আগানো সম্ভব নয়। তাই অন্য কোন ভাষা না শিখলেও ইংরেজী টা শিখতেই হবে সেটা আজ হোক আর কাল হোক।
✅সঞ্চয় করা: এখন থেকেই টাকা জমানো শুরু করতে হবে, হোক সেটা অল্প পরিমাণ তবুও সঞ্চয় করতেই হবে কেননা এই টাকা অনেক কাজে দিবে ভবিষ্যতে।
✅জ্ঞান অর্জন করা: বিভিন্ন ফ্রি, পেইড কোর্স এবং ট্রেনিং, সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে হবে।
✅বাজে সঙ্গ এড়িয়ে চলা: বন্ধু-বান্ধব নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুব সর্তক থাকতে হবে। এই বয়সে অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী বিগড়ে যায় খারাপ বন্ধু-বান্ধবের পাল্লাই পড়ে। তাই বন্ধু-বান্ধব নির্বাচন বুঝে শুনে করতে হবে, যদি খারাপ সঙ্গ থাকে ধীরে ধীরে তা পরিত্যাগ করা শুরু করতে হবে।
✅পরিবারের সাথে সময় কাটানো: এই সময়ে যত বেশি পারা যায় পরিবারের সাথে সময় কাটানো উচিত যা ভষ্যিতে আমাদের স্মৃতিতে কিছু সুন্দর মূহুর্ত হয়ে থাকবে।
✅খেলাধুলা: লেখা পড়ার পাশাপাশি যে কোন খেলা ধুলায় জড়িত থাকতে হবে, এতে করে মন স্বাস্থ্য উভয় ভালো সুস্থ থাকবে।
✅মোবাইল থেকে দূরে থাকা: বর্তমানে মোবাইল ফোন আমাদের নেশায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সোসাইল মিডিয়া, জাক-জমকপূর্ণ অ্যপর্স এবং সেই সাথে বিভিন্ন ধরণের গেম এই সব কিছুর মোহে আমরা অন্ধভাবে ডুবে গেছি। মোবাইল আসক্তির কারণে আমাদের জীবনের মূল্যবান সময় গুলো বৃথায় পরিণত হচ্ছে, যার ফলে লেখা-পড়া বা ব্যাক্তিগত জীবন উভয়ই ক্ষতি হচ্ছে। তাই যতটা সম্ভব মোবাইল আসক্তি থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত, কোন মতেই মোবাইলের নেশায় পড়া যাবে না।
তো এই ছিলো ১৬ থেকে ২১ বছর বয়সে কি করা উচিত তা নিয়ে কিছু কথা। সবশেষে একটা কথা বলেই শেষ কতে চাই। এই বয়সে যে যত বেশি মাস্তি করবে, ভবিষ্যতে সে তত বড় শাস্তি পাবে।