১০ টি নেটওয়ার্ক হ্যাকিং টুল

হ্যাকিং একটি ডিজিটাল আর্ট যা ব্যবহার করে অনলাইনে সকল ডিজিটাল ডাটা অ্যাক্সেস করা যায়। পুরো পৃথিবী যখন থেকে ডিজিটালাইজেশনে রূপান্তরিত হয় তখন থেকে তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করা শুরু করে। হ্যাকার দের হাত থেকে ডাটা নিরাপদে রাখার জন্য সিকিউরিটি এক্সপার্টরা অনেক নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলেছে। কিন্তু হ্যাকাররা সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আরও উন্নত করার কারণে ডাটা পুরোপুরি হ্যাকারদের কাছে থেকে সুরক্ষিত রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে ইথিক্যাল হ্যাকারদের সহায়তায় এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া পূর্বের থেকে সহজ হয়েছে। আজকের পোস্টে ইথিক্যাল হ্যাকিং এর জন্য ১০ টি নেটওয়ার্ক হ্যাকিং টুল নিয়ে আলোচনা করবো। এসকল টুল সম্পর্কে ধারণা থাকলে নিজেকে হ্যাকিং থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।

নেটওয়ার্ক হ্যাকিং টুল

হ্যাকিং করার জন্য হ্যাকার বিভিন্ন ধরনের টুল ব্যবহার করে। বিশেষত কোন ধরনের অ্যাটাক হবে তার উপর টুল সিলেকশন ডিপেন্ড করে। তবে ভিকটিম আইডেন্টিফাই করার জন্য নেটওয়ার্ক রিলেটেড টুলের সহায়তা প্রয়োজন পরে। তো চলুন ১০ টি নেটওয়ার্ক হ্যাকিং এবং ট্রাবলশুটিং টুল সম্পর্কে জেনে নেই।

Nmap

এনম্যাপের পূর্ণরূপ Network Mapper যা একটি ফেমাস ইথিক্যাল হ্যাকিং টুল। সাধারণত টার্গেটেড ভিকটিমের ডিভাইস সম্পর্কে ডাটা কালেক্ট করতে এই টুল ইউজ করা হয়। এনম্যাপ একটি নেটওয়ার্কের সিকিউরিটি স্ক্যান, পোর্ট স্ক্যান সহ পুরো নেটওয়ার্ককে এক্সপ্লোর করে।

যার ফলে টার্গেটেড নেটওয়ার্কের সকল ধরনের ডাটা খুঁজে বের করা যায়। আমরা জানি হ্যাক করার প্রথম স্টেপ হলো ডাটা কালেক্ট করা। অর্থাৎ যত বেশি ডাটা কালেক্ট করা হবে তত তাড়াতাড়ি ভিকটিমের ডিভাইসের বা সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া যাবে।এনম্যাপ একটি ওপেন সোর্স এবং ক্রস প্ল্যাটফর্ম টুল। অর্থাৎ আপনি উইন্ডোজ, ম্যাক এবং লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে এই টুল ফ্রীতে ইউজ করতে পারবেন। টুলটির মেইন ফিচার গুলো হলো নেটওয়ার্ক স্ক্যানিং, পোর্ট স্ক্যানিং, হোস্ট ডিটেকশন, ওএস ডিটেকশন, স্ক্রিপ্ট ইন্টারঅ্যাকশন ইত্যাদি।    

Wireshark

 ওয়্যারসার্ক একটি ওপেন সোর্স অ্যাপ্লিকেশন। মূলত নেটওয়ার্কের রিয়েল টাইম ডাটা অ্যানালাইজ করার জন্য এই টুল ইউজ করা হয়। উইন্ডোজ, ম্যাক এবং লিনাক্স সহ সকল অপারেটিং সিস্টেমে সুন্দরভাবে চলার জন্য এটি অনেক পপুলার। এছাড়া নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিকের সমস্যা এবং প্রতিটি সেন্ড/রিসিভ ডাটা বিশ্লেষণ করার জন্য ওয়্যারসার্ক সব থেকে সেরা সার্ভিস দেয়।

এই টুল দিয়ে ইন্টারনেট ট্র্যাফিকের প্রতিটি প্যাকেট রিয়েল টাইমে ক্যাপচার করা যায় এবং তা নিখুঁত ভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। ওয়্যারসার্কের এই শক্তিশালী ফিচারের কারণে নেটওয়ার্কে কোন সমস্যা থাকলে তা সঠিকভাবে খুঁজে বের করে তা ঠিক করা যায়। প্যাকেট ডাটা ফিল্টার অপশন ইউজ করে অনেকগুলো ডাটা থেকে স্পেসিফিক ডাটা আলাদা করে বিশ্লেষণ করা যায়।ডাটা প্যাকেট এনক্রিপ্ট করা থাকলে তা ডিক্রিপ্ট করার জন্য ওয়্যারসার্কের বিল্ডইন ফিচার আছে যা অনেক শক্তিশালী। টুলটির আরেকটি বিশেষত্ব হলো এটি দিয়ে ক্যাপচার করা প্যাকেট ডাটা হিউম্যান রিডেবল ফরম্যাটে কনভার্ট করে পড়া যায়। এগুলো ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ এনালাইসিস করার যায় জন্য ওয়্যারসার্ক এত বিখ্যাত।

SolarWinds Network Performance Monitor 

সোলারউইন্ড এনপিএম একটি নেটওয়ার্ক মনিটরিং এবং ম্যানেজমেন্ট টুল। এটি ইউজ করে ডিভাইস এবং নেটওয়ার্ক উভয় সিস্টেম মনিটর করা যায়। অর্থাৎ এই টুল ইউজ করে আপনি নেটওয়ার্কে থাকা প্রতিটি ডিভাইস আলাদা আলাদা ভাবে মনিটর করতে পারবেন। এছাড়া অনেকগুলো সার্ভারের নেটওয়ার্ক একসাথে মনিটর করতে পারবেন। এদের অসংখ্য ডাটা চ্যানেল আছে যা দিয়ে নেটওয়ার্কের ট্রাবলশুটিং করা যায়।

টুলটি ইউজ করে নেটওয়ার্কের ডিপ স্ক্যান করার মাধ্যমে ডাটা খুঁজে বের করা যায়। এটি ইউজ করে ছোট বড় সকল ধরনের নেটওয়ার্ক কানেকশন ম্যানেজ করা যায়। এনপিএম টুলটির ইউজার ইন্টারফেস অনেক কাস্টমাইজড এবং ক্লিন। টুলটি মূলত পেইড তবে ৩০ দিনের জন্য ট্রায়াল হিসেবে ইউজ করা যায়।

OpUtils

এটি একটি পাওয়ারফুল এবং পূর্ণাঙ্গ নেটওয়ার্কিং টুল। এতে নেটওয়ার্ক মনিটর এবং ট্রাবলশুট করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল টুল বিল্ডইন পাওয়া যায়। এর নেটওয়ার্ক সিস্টেম স্ক্যান করার ক্ষমতা অন্যান্য অনেক টুল থেকে অনেক গুন ফাস্ট। যার ফলে নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটর দের কাছে এই টুলের অনেক কদর। যাইহোক OpUtils একটি অ্যাডভান্স নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট টুল।

এটি IPv4 এবং IPv6 সহ সকল নেটওয়ার্ক প্রোটোকল সাপোর্ট করে। যদিও টুলটি ম্যাক ইউজারদের জন্য এভেইলেবল না তবে উইন্ডোজ এবং লিনাক্স ইউজার সহজেই এই টুল ইউজ করতে পারবে। OpUtils আইপি মনিটরিং, সুইচ পোর্ট ম্যাপিং সহ আরও প্রায় ৩০ টির অধিক নেটওয়ার্ক রিলেটেড সাপোর্ট দিয়ে থাকে।

Wireless Network Watcher

এই টুল দিয়ে ওয়্যারলেস কানেকশন স্ক্যান করা হয়। মূলত এই টুল ওয়্যারলেস কানেকশনে যুক্ত প্রতিটি ডিভাইস শো করে। যেখানে কানেক্টেড ডিভাইসের আইপি অ্যাড্রেস, ডিভাইস নেম, ম্যাক অ্যাড্রেস, এডাপ্টার নেম বের করা যায়। একই নেটওয়ার্কে থাকা ডিভাইস গুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য এই টুল অনেক ভালো সার্ভিস দেয়। এটি শুধু উইন্ডোজ ভিত্তিক একটি ছোট টুল যা শুধু কানেক্টেড ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের ডাটা কালেক্ট করতে পারে।

Aircrack

এয়ারক্র্যাক একটি পপুলার ওয়াইফাই মনিটরিং এবং হ্যাকিং স্যুইট। অর্থাৎ এটি শুধু একটি সিঙ্গেল টুল নয়। এতে একই সাথে অনেকগুলো ওয়াইফাই হ্যাকিং রিলেটেড টুল ইন্ট্রিগেট করা আছে। একজন নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার অথবা হ্যাকার উভয়ের জন্য এই টুল সবার শুরুতে শেখা অতি জরুরী। কারণ এই টুল শিখলে একই সাথে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক টেস্ট, মনিটর করা যাবে। এছাড়া ওয়াইফাই অ্যাটাক এবং WEP এবং WPA সিকিউরিটি ক্র্যাক করা যাবে। এয়ারক্র্যাক শুধু লিনাক্স এবং উইন্ডোজ সিস্টেমে ইউজ করা যায়।  

Wifiphisher 

এটি একটি মোস্ট পপুলার ওয়াইফাই হ্যাকিং টুল। ফিশিং অ্যাটাক সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। এই টুল ব্যবহার করে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে অটোমেটিক ফিশিং অ্যাটাক করা হয়। মূলত ওয়াইফাই ইউজার এবং পাসওয়ার্ড বের করার জন্য এই পদ্ধতি ইউজ করা হয়। অন্যান্য ওয়াইফাই হ্যাকিং টুল থেকে এর প্রধান পার্থক্য হলো এটি সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মেথড ইউজ করে। ওয়াইফাই ফিসার একটি ফ্রী টুল যা গিটহাবে সবার জন্য উন্মুক্ত করা আছে।  

Kismet 

কিসমেট একটি ওয়্যারলেস ডিভাইস এবং নেটওয়ার্ক ডিটেক্টর টুল। এটি একটি ক্রস প্ল্যাটফর্ম টুল যা ম্যাক, উইন্ডোজ এবং লিনাক্সে ইউজ করা যায়। বিশেষ করে লিনাক্স সিস্টেমে এই টুল সবথেকে ভালো কাজ করে। টুলটি ইউজ করে সকল ধরনের নেটওয়ার্ক ডিটেক্ট করা সহ প্যাকেট স্নিফিং করা যায় এবং নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশ রোধ করা যায়।

Ping/Tracert

 পিং একটি অতিপ্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক কমান্ড যা প্রতিটি নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনের জানা প্রয়োজন। এটি দিয়ে অনেক সহজেই নেটওয়ার্ক কানেকশন টেস্ট করা যায়। ICMP প্যাকেট ডাটা সেন্ড এবং রিসিভ করে এই কমান্ড উক্ত নেটওয়ার্ক সচল না অচল তা জানিয়ে দেয়। অন্যদিকে Tracert পিং কমান্ডের মতই কাজ করে তবে পিং এর থেকে বেশি ডাটা শো করে। অর্থাৎ নেটওয়ার্ক ডাটা সেন্ড এবং রিসিভ করতে কোন রুট ট্রাভেল করে আসছে সেই ডাটা শো করে। ইন্টারনেট কানেকশন যখন অনেক স্লো হয় বা নেটওয়ার্ক ল্যাটেন্সি বেড়ে যায় তখন Tracert কমান্ড দিয়ে সমস্যা খুঁজে বের করা যায়।

Ipconfig/ifconfig

এটি একটি জনপ্রিয় কমান্ড যা নেটওয়ার্ক এডাপ্টারের ফুল কনফিগারেশন শো করে। উইন্ডোজ ওএস হলে ipconfig এবং ম্যাক বা লিনাক্স হলে ifconfig ইউজ করতে হয়। আমরা সচরাচর আমাদের ডিভাইসের আইপি, সাবনেট মাস্ক, ডিফল্ট গেটওয়ে ইত্যাদি ডাটা দেখার জন্য এই পদ্ধতি ইউজ করি।

 হ্যাকিং করতে বা নিজেকে হ্যাকিং থেকে বাঁচাতে আমাদের অবশ্যই নেটওয়ার্ক হ্যাকিং অথবা মনিটরিং পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এতে আমরা যেমন টার্গেটেড ডিভাইসে অ্যাটাক করতে পারবো তেমনি এরকম অ্যাটাক থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো। আশা করি এই পোস্ট পড়ে নেটওয়ার্ক রিলেটেড টুল সম্পর্কে আপনার ধারণা আরও পরিষ্কার হয়ে গেছে। যে কোন হ্যাকিং রিলেটেড প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ। 

Leave a Comment