ম্যালওয়ার অ্যাটাক সনাক্ত করার উপায় কি?

প্রথম ১৯৭১ সালে Creeper নামে একটি কম্পিউটার ভাইরাস সফলভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। উক্ত ভাইরাসটি ছিল ইতিহাসের প্রথম ভাইরাস যা অনলাইনের মাধ্যমে অন্য একটি কম্পিউটারের অ্যাক্সেস নিতে সফল হয়। পরে ১৯৮৬ সালে Brain নামক একটি ভাইরাস প্রথম পার্সোনাল কম্পিউটার ভাইরাস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। যাইহোক, ভাইরাস আবিষ্কারের শুরু থেকেই এর প্রধান মোটিভ হলো অন্য সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক ইনফেক্ট করা। যার মাধ্যমে ডাটা চুরি করা এবংভিক্টিমকে অসুবিধায় ফেলে দেওয়াই হলো এর প্রধান উদ্দেশ্য। সাম্প্রতিক সময়ে এমন প্রচুর ম্যালওয়ার অ্যাটাক সংঘটিত হচ্ছে।  আমাদের আজকের লেখায় আমরা ম্যালওয়ার অ্যাটাক সনাক্ত করার উপায় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

ম্যালওয়ার অ্যাটাক সনাক্ত করার উপায় কি

হঠাৎ কম্পিউটার স্লো হওয়া 

কম্পিউটার অনেক গুলো কারনে স্লো হয়। কম্পিউটারের কনফিগারেশন বা টেকনিক্যাল সমস্যা থাকলে স্লো হয়। নিয়মিত সিস্টেম ক্লিন না করলে পিসি স্লো কাজ করে। এসকল কারন বাদেও কম্পিউটার ম্যালওয়ারের কারনে স্লো কাজ করে।আমরা জানি, ম্যালওয়ার নিজে নিজে কাজ করে। অর্থাৎ এটি যখন সিস্টেমে প্রবেশ করে তখন তা নিজের মত আরও অনেকগুলো ম্যালওয়ার  তৈরি করে। এই প্রসেস চালানোর জন্য ম্যালওয়ারটি অতিরিক্ত র‍্যাম এবং সিপিইউ ইউজ করে। যার কারনে সিস্টেম তার অন্যান্য স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা পায়। তা ছাড়া ম্যালওয়ার সিস্টেমের অনেক গুলো প্রসেসে ইফেক্ট করে। যে কারনে কম্পিউটার তার স্বাভাবিক কাজ ঠিক মতো করতে পারে না। এসকল সমস্যার কারনে আমরা কম্পিউটারের পারফর্মেন্স অনেক স্লো পাই। মোটকথা আপনার কম্পিউটারে যদি উপরে বর্ণিত কোন সমস্যা পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই ম্যালওয়ার চেক করে নিতে হবে।  

সিস্টেমের উল্টো পাল্টা অ্যাক্টিভিটি

ম্যালওয়ার তৈরি হয় অনেক গুলো খারাপ এবং ক্ষতিকারক কোডের দ্বারা। এসব কোড এমন ভাবে কম্যান্ড করা থাকে যা সিস্টেমে ঢোকা মাত্র তার ইভিল কার্যক্রম শুরু করে দেয়। যেমন কোন কারন ছাড়াই দেখবেন যে আপনার স্টোরেজের কোন ফাইল ডিলিট হয়ে গেছে। অথবা ভালো এবং ফ্রেশ ফাইল গুলো করাপ্ট বা নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক সময় ম্যালওয়ার এর কারনে সিস্টেম ঠিক মত মাউস এবং কিবোর্ড কমান্ড বুঝতে পারে না। তখন যা কম্যান্ড করা হয় তার উল্টো টা হয়। ধরুন আপনি একটি ফোল্ডার তৈরি করলেন প্রয়োজনীয় ফাইল রাখার জন্য। কিন্তু ফাইল কপি করে পেস্ট করতে গিয়ে দেখলেন সে ফোল্ডারের ভেতরে শর্টকাট তৈরি হয়ে আছে। তারপরেও পেস্ট করলেন এবং কিছুক্ষণ পর আবার সেই ফোল্ডারে গিয়ে দেখলেন ম্যালওয়ার মূল ফাইলের একটি কপি ফাইল তৈরি করেছে। যা আপনার মূল ফাইল কে রিপ্লেস করে ফেলেছে। এতে আপনার ডকুমেন্ট গুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অথচ আপনি সিস্টেমকে এমন কোন কম্যান্ড কিন্তু দেন নি। ম্যালওয়ারের কারনে সিস্টেম এরকম আরও অনেক উদ্ভট কাজ করে থাকে।

অপ্রয়োজনীয় ফোল্ডার

অনেকেই একে ফোল্ডার ভাইরাস বা ফোল্ডার ডুপ্লিকেটর ভাইরাস বলে অভিহিত করে থাকে। তবে নাম যাই হোক এই ম্যালওয়ারের প্রধান কাজ সিস্টেমে র‍্যান্ডমলি ফোল্ডার তৈরি করা। এটি অনেক শক্তিশালী এবং বিরক্তিকর একটি ম্যালওয়ার। অনলাইনে এই সমস্যা নিয়ে সার্চ করলেই আপনার মত অনেক ভুক্তভোগী পাবেন। তারা এই সমস্যা নিয়ে খুবই অতিষ্ঠ হয়ে আছে। ফোল্ডার তৈরির পাশাপাশি এই গোত্রের ম্যালওয়ার ফাইল এবং ফোল্ডারের (ফোল্ডারের এক্সটেনশন থাকে না) এক্সটেনশন পরিবর্তন ফেলে।

যেমন এক্সটেনশন পরিবর্তন করে exe করে দেয় যাতে উক্ত ফাইল উইন্ডোজ কম্পিউটার একটি সফটওয়্যার হিসেবে চেনে। তো আপনার সিস্টেমের ফাইল এবং ফোল্ডার গুলো exe এক্সটেনশনে কনভার্ট হলে টা আর আপনি স্বাভাবিকভাবে ওপেন করতে পারবেন না। এমনকি উক্ত ফাইল বা ফোল্ডারের সকল ডাটা আপনি হাড়িয়ে ফেলতে পারেন। সর্বোপরি যখনি আপনার সিস্টেমে এরকম কিছু লক্ষ করবেন সাথে সাথে ম্যালওয়ার রিমুভ করার প্রক্রিয়া শুরু করে দেবেন।

অতিরিক্ত রিসোর্স ব্যবহার

একটি কম্পিউটার কি কি রিসোর্স ইউজ করে তা জানার জন্য রিসোর্স মনিটর ইউজ করা হয়। আপনার সিস্টেম কি পরিমাণ র‍্যাম, সিপিইউ, জিপিইউ এবং স্টোরেজ ইউজ করছে তার বিস্তারিত রিসোর্স মনিটরের মাধ্যমে জানা যায়। আমরা যখন সিস্টেমে নতুন কিছু ইন্সটল করি তখন তা সেখানে শো করে। নিয়মিত ভাবে মনিটর করলে সিস্টেমে কোন অপ্রয়োজনীয় কিছু থাকলে তা ডিটেক্ট করা যায়। যদিও অপারেটিং সিস্টেম থেকে কিছু প্রসেস ডিফল্ট ভাবে এখানে শো করে। কিন্তু ম্যালওয়ার জাতীয় কিছু সিস্টেমে ইন্সটল আছে কি নাই তা এখান থেকে সহজেই বের করা যায়। অর্থাৎ আপনার সিস্টেমের কোন প্রসেস যখন আনইউজুয়াল রিসোর্স ইউজ করবে তখন তা ভালো করে চেক করে দেখবেন। এ ব্যাপারে ম্যালওয়ার স্ক্যানার সফটওয়্যার গুলো ইউজ করে দেখতে পারেন। এতে মূল সমস্যা ম্যালওয়ার ঘটিত হলে তা ধরে ফেলতে পারবেন।

অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইন্সটলড 

প্রয়োজনের খাতিরে আমাদেও প্রায় অনেক ধরনের সফটওয়্যার ইন্সটল করতে হয়। বিশেষ করে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ক্র্যাক করে ইউজ করি। কিন্তু এই ক্র্যাক সফটওয়্যার গুলো একেকটা ম্যালওয়ারের আস্তানা। বর্তমান সময়ে এই ক্র্যাক ফাইলের মাধ্যমে অনেক বেশি ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। আপনি যদি কোন ক্র্যাক সফটওয়্যার ইউজ না করে থাকেন তাহলে আপনি অনেকটা সেফ আছেন। তবে এর পরেও যদি দেখেন যে অপ্রয়োজনীয় কোন সফটওয়্যার আপনার সিস্টেমে আপনার অগোচরে ইন্সটল হয়ে আছে। তাহলে তারাতারি উক্ত সফটওয়্যারটি আনইন্সটল করে পুরো সিস্টেম ম্যালওয়ার স্ক্যান করে ক্লিন করে নিবেন। বেশিরভাগ সময় এধরণের সফটওয়্যার রিমুভ করা যায় না। আবার অনেকসময় এ ধরনের সফটওয়্যার খুঁজে পাওয়া যায়না। তবে অপারেটিং সিস্টেম কীভাবে কাজ করে সে ব্যাপারে যদি মোটামুটি ধারণা লাভ করতে পারেন তাহলে সফটওয়্যার হাইড থাকলেও তা বের করে রিমুভ করতে পারবেন।

এন্টিভাইরাস রিপোর্ট 

উইন্ডোজ ১০ এর ডিফল্ট এন্টিভাইরাস ম্যালওয়ার ডিটেক্ট করার জন্য অনেকটাই সফল। সাম্প্রতিক আপডেটের ফলে এটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। তবে এন্টিভাইরাস ম্যালওয়ার বা অন্যান্য হ্যাকিং মেথড আটকে দিতে পুরোপুরিভাবে উপযুক্ত নয়। তবে এসকল এন্টিভাইরাস দিয়ে সিস্টেম স্ক্যান করে ম্যালওয়ার এর উপস্থিতি খুঁজে বের করা সম্ভব। কোন ভাবে খুঁজে বের করতে পারলে তার উপর ম্যানুয়াল বা সফটওয়্যার দিয়ে অ্যাকশন নেওয়া সম্ভব। যাইহোক আপনার কম্পিউটার কে ম্যালওয়ার থেকে সুরক্ষা দিতে অবশ্যই এন্টিভাইরাস রিপোর্ট যাচাই করে দেখবেন। এতে ম্যালওয়ার উপস্থিতির বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাবেন।

এনক্রিপ্টেড ফাইল

এটি একটি মোস্ট কমন ম্যালওয়ার ডিটেকশন সিস্টেম। অর্থাৎ আপনার সিস্টেমের কোন ফাইল যদি এনক্রিপ্টেড হয় বা আজগুবি এক্সটেনশনে কনভার্ট হয়, তাহলে বুঝে নিবেন ম্যালওয়ার অ্যাটাক। এটি সাধারণত র‍্যানসমওয়্যার যা ম্যালওয়ারের একটি শাখা। সাধারণ এধরণের ম্যালওয়ার ফাইল এনক্রিপ্ট করে তা ডিক্রিপ্ট করার জন্য ওনারের কাছে অর্থ দাবী করে। বিশ্বে এখন পর্যন্ত সব থেকে বেশি ক্ষতি করেছে এই শাখার সদস্যরা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ওয়ানাক্রাই, পেটা, কোভিডলক ইত্যাদি র‍্যানসমওয়্যার। তো যখনি এরকম সমস্যার সম্মুখীন হবেন তখন পুরো সিস্টেম ফরম্যাট করে নতুন করে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল দিন। এরপর আপনার সিস্টেমে কীভাবে র‍্যানসমওয়্যার অ্যাটাক হয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করুন। যাতে পরবর্তী সময়ে আর এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার স্বীকার না হতে হয়।

আপনি যদি একজন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ইউজার হন তাহলে ম্যালওয়ার সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকতেই হবে। কারন প্রায় প্রতিটা ম্যালওয়ার উইন্ডোজ সিস্টেমকে টার্গেট করে তৈরি করা হয়। আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনি ম্যালওয়ার সম্পর্কে মোটামুটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। এর সাথে সাথে কীভাবে ম্যালওয়ার অ্যাটাক ডিটেক্ট করবেন সে ব্যাপারেও বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আপনার যে কোন মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top