ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে আমাদের জীবন এখন অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। প্রায় সব ধরনের কাজ এবং সেবা এখন অনলাইনে সহজেই পাওয়া যায়। বাস টিকিট বুক করা থেকে ঘরে বসে খাবার অর্ডার করার মত সকল কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হচ্ছে। করোনা মহামারীর সময় অনলাইন দুনিয়া আমাদের একমাত্র ভরসা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
প্রয়োজনে এবং অপ্রয়োজনে ইন্টারনেট ইউজ করার ফলে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য সরকার অথবা কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা হচ্ছে। যার ফলে আমাদের অন্যান্য সবকিছুর সাথে সাথে ইন্টারনেটে সুরক্ষিত থাকার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অনলাইনে সিকিউর থাকার জন্য আমাদের সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করা উচিত। তো আজকে আমরা জানবো সাইবার সিকিউরিটি কি? সাইবার সিকিউরিটি কত প্রকার? তো চলুন শুরু করা যাক।
Table of Contents
সাইবার সিকিউরিটি কি?
ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য আমাদের অনলাইনে নিজের তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এতে আমাদের নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পার্সোনাল তথ্য দিতে হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান বা অ্যাপ্লিকেশন অথবা ওয়েবসাইট পার্সোনাল ডাটার সর্বোচ্চ সিকিউরিটি দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু তারা সিকিউরিটি নিশ্চিত করে কি করে না তা সত্যিকার অর্থে প্রমাণিত হয়না।
আপনার আমার পরিচিত গুগল, ফেসবুক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গুলো নির্দ্বিধায় আমাদের প্রায় সকল ডাটা সংগ্রহ করে। এগুলো নিয়ে যতই কন্ট্রোভারসি তৈরি হোক এতে তাদের একটুও মাথা ঘামানো নেই, যাইহোক দিন শেষে অনলাইন দুয়ায় ডাটাই সব। অর্থাৎ ইন্টারনেটের একমাত্র সম্পদ হলো ডাটা। কারণ ইন্টারনেট চলেই ডাটা আদান প্রদানের মাধ্যমে। বর্তমান সময়ে এই ডাটার উপর নির্ভর করেই বিভিন্ন ধরনের রাজনীতি এবং ক্রাইম হচ্ছে।
যেহেতু ডাটা খুবই দামী এবং প্রয়োজনীয় তাই হ্যাকাররা সবসময় এই ডাটা চুরি অথবা নষ্ট করার চেষ্টায় থাকে। ইন্টারনেটে সবার অ্যাক্সেস থাকার কারণে ডাটা গুলো সবসময় হ্যাকিং অ্যাটাকে পরার ভয়ে থাকে। আর এসকল অ্যাটাক থেকে তথ্য সুরক্ষিত রাখার প্রক্রিয়াকে সাইবার সিকিউরিটি বলে।
সহজ করে বলতে গেলে অনলাইনে সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ককে হ্যাকিং থ্রেড থেকে রক্ষা পেতে যে সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাই সাইবার সিকিউরিটি। সাইবার সিকিউরিটি একটি ইউজফুল প্রসেস যা নিয়মিতভাবে পটেনশিয়াল অ্যাটাক থেকে আমাদের অনলাইন অ্যাক্সেস সুরক্ষিত রাখে।
সাইবার সিকিউরিটি কত প্রকার
সাইবার সিকিউরিটি সাধারণত ৫ প্রকার। চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক–
ক্রিটিকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি
ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। যার সাফল্য হিসেবে ওয়াটার পিউরিফিকেশন, পাওয়ার গ্রিড, ট্র্যাফিক কন্ট্রোল সহ অন্যান্য সেবামূলক কাজ অনলাইনে করা সম্ভব হচ্ছে। এসকল সিস্টেমগুলো ইন্টারনেট কানেক্টেড কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যা অর্থ এবং সময় বাঁচিয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় যখন এসকল রাষ্ট্রীয় সেবামূলক সংস্থার অ্যাক্সেস কোন আনাড়ী হ্যাকারের হাতে চলে যায়। যেহেতু কোন সিস্টেম হ্যাকিং থেকে পুরোপুরি সুরক্ষিত নয় সেহেতু এগুলোর সিকিউরিটির দিকে আমাদের বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। অতএব এসকল প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে উচ্চমানের সাইবার সিকিউরিটির। অর্থাৎ ক্রিটিকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারে যে সকল দুর্বলতা আছে তা প্রতিরোধ করা ক্রিটিকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এর অন্তর্গত।
অ্যাপ্লিকেশন সিকিউরিটি
কোন সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখতে সফটওয়্যারগত সিকিউরিটির কোন বিকল্প নেই। অ্যাপ্লিকেশন ইউজ করে হ্যাকিং করা হ্যাকারদের একটি পছন্দের পদ্ধতি। কারণ অ্যাপ্লিকেশনে সহজেই ম্যালওয়ার এবং মেলিসিয়াস কোড ইনসার্ট করা যায়।
আমরা বেশিরভাগ সময় পেইড অ্যাপ্লিকেশনগুলো ফ্রীতে ইউজ করার জন্য ক্র্যাক ভার্সন সিস্টেমে ইন্সটল করি। এতে প্রায় সময় আমাদের সিস্টেম সরাসরি হ্যাকারের কন্ট্রোলে চলে যায়। বিশেষ করে ট্রোজান, অ্যাডওয়ার, ভাইরাস, র্যানসমওয়ার ইত্যাদি অ্যাটাক অ্যাপ্লিকেশন ইউজ করে করা হয়।
এসকল অ্যাটাক থেকে সিস্টেমকে রক্ষা করার জন্য সাইবার সিকিউরিটির প্রয়োজন পরে। অ্যাপ্লিকেশন সিকিউরিটির জন্য ফায়ারওয়াল, এন্টিভাইরাস ইত্যাদি পদ্ধতি ইউজ করা হয়। এতে সিস্টেম সবসময় এন্টিভাইরাস দ্বারা স্ক্যান করে ভাইরাস সহ অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন থ্রেড থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। অন্যদিকে ফায়ারওয়াল সিস্টেমে থাকা অ্যাপ্লিকেশন গুলোকে ইন্টারনেট ইউজ করা থেকে বিরত রাখে।
নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি
সচরাচর হ্যাকারদের কাছে সিস্টেমের ডিরেক্ট অ্যাক্সেস থাকে না। যার কারণে তারা ডাটা চুরি করার জন্য ইন্টারনেট ইউজ করে নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে। এখন যদি নেটওয়ার্কের সিকিউরিটি শক্ত করা হয় তাহলে এমনিতেই অ্যাটাক কমে যাবে।
প্রতিটি নেটওয়ার্কের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিকিউরিটি নিশ্চিত করা অতি জরুরী। একজন সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টের কাজ থাকে পুরো নেটওয়ার্ক সিস্টেম আপডেট প্রযুক্তি দ্বারা সিকিউর করা। এছাড়া এক্সট্রা লগইন কন্ট্রোল, হার্ড পাসওয়ার্ড ইউজ, নিয়মিত নেটওয়ার্ক মনিটর, ফায়ারওয়াল ইউজ, পয়েন্ট টু পয়েন্ট এনক্রিপশন সহ অন্যান্য সিকিউরিটি মেথড অ্যাপ্লাই করা।
ইন্টারনেট অফ থিংস সিকিউরিটি
আইওটি ডিভাইসের প্রচলন দিন দিন বেড়েই চলছে। ২০২১ সালের মধ্যে ৫২০ বিলিয়ন ডলারের মার্কেটে পরিণত হতে যাচ্ছে এই টেকনোলজি। তবে এর প্রসারে সব থেকে বড় বাঁধা হলো সিকিউরিটি দুর্বলতা। আইওটি টেকনোলজিতে সিস্টেমের অ্যাক্সেস যদি দুর্বল সিকিউরিটির হয় তাহলে হ্যাকার সহজেই আপনার বাসার অ্যাক্সেস নিতে পারবে। যেখানে আপনার প্লেসে ইমপ্লিমেন্ট করা অ্যাপ্লায়েন্স, সেন্সর, টিভি, সিকিউরিটি ক্যামেরা ইত্যাদি সব কিছুর অ্যাক্সেস পেয়ে যাবে।
যা নিঃসন্দেহে আপনার সুরক্ষা একবারে নষ্ট করে দেবে। এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে অবশ্যই সাইবার সিকিউরিটির সহায়তা নিতে হবে। প্রোপার ডিফেন্স ইন্টারনেট কানেক্টেড ডিভাইস হ্যাকার থেকে সুরক্ষিত রাখে এবং তথ্যের সুরক্ষা প্রদান করে।
ক্লাউড সিকিউরিটি
ডাটা স্টোর করার গতানুগতিক ধারণা ক্লাউড টেকনোলজি আসার পর অনেকটা বদলে গেছে। ফিজিক্যাল স্টোরেজের থেকে ক্লাউড স্টোরেজে ডাটা অ্যাক্সেস করা আরও সহজ এবং দ্রুতগতির। ক্লাউড সিস্টেমে আপনি আনলিমিটেড ডাটা স্টোর করতে পারবেন।
তবে ক্লাউডে ডাটা হ্যাকিং নিয়ে অনেকেই ভয়ের মধ্যে থাকে। যদিও ফিজিক্যাল স্টোরেজের থেকে ক্লাউডে ডাটা দ্রুত অ্যাক্সেস করা যায় তবে এখানে ডাটা ব্রিচের একটু ভয় থেকেই যায়। ক্লাউড সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলো নিয়মিতভাবে তাদের সিস্টেম মনিটর করে। তারা সিকিউরিটি শক্ত করার জন্য অত্যাধুনিক সাইবার সিকিউরিটি টেকনিক ফলো করে। এতে সহজেই ডাটা সুরক্ষিত করা সম্ভব হয়।