ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার কারা? হ্যাকার কত প্রকার?

ইনফরমেশন সিকিউরিটি বর্তমান সময়ের একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। যখন থেকে ডাটা অনলাইন ভিত্তিক হওয়া শুরু হয়েছে তখন থেকে এর নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ইন্টারনেট একটি উন্মুক্ত মাধ্যম যেখানে সকল ডাটা উন্মুক্ত হিসেবে থাকে। সে সকল ডাটা চুরি করে নিজের কাজে লাগানোর জন্য এক শ্রেণীর মানুষ সর্বদা চেষ্টা করে যায়। তাদের এই হ্যাকিং কার্যক্রম প্রতিষ্ঠানের এবং ব্যক্তিগত ইনফরমেশন রক্ষা করার জন্য হ্যাকিং এর বিরুদ্ধে সরকারীভাবে প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হ্যাকিং এর উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে হ্যাকারদের ক্লাসিফিকেশন করা হয়। এদের মধ্যে সবাই ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের সব থেকে বেশি ভয় পায়। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার কারা? ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায় কি তা নিয়ে আলোচনা করবো।

হ্যাকিং কি?

ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের হ্যাকিং কি সে সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। সাধারণত মালিকের অনুমতি না নিয়ে তার অনলাইন অ্যাকাউন্টে বা সিস্টেমে অবৈধ অনুপ্রবেশকে হ্যাকিং বলে। হ্যাকিং করার জন্য অনেকগুলো পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এ পদ্ধতি গুলো ইউজ করে হ্যাকার সহজেই সিস্টেমের অ্যাক্সেস নিয়ে নিতে পারে। সময়ের সাথে সাথে যদিও সিকিউরিটি শক্তিশালী হচ্ছে কিন্তু তারপরেও তথ্য নিরাপত্তা এখনো অনেক কঠিন একটি কাজ।বর্তমানে হ্যাকিং অনেক বড় একটি ইন্ডাস্ট্রি। বড় বড় টেক কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব খরচে ইথিক্যাল হ্যাকারদের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। যাতে তারা নিজেরা নিজেদের সিস্টেমকে আরও উন্নত এবং সিকিউরভাবে রাখতে পারে।

হ্যাকার কত প্রকার?

সাধারণত কাজের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে হ্যাকারদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এদের মধ্যে যারা ভালো ইনটেনশন নিয়ে হ্যাকিং করে এবং সিস্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার বলে। আবার যারা মালিকের অনুমতি না নিয়ে সিস্টেম হ্যাক করে কিন্তু পরবর্তীতে আবার মালিক কে তার সিস্টেমের দুর্বলতার কথা জানায়। এরকম হ্যাকারদের গ্রে হ্যাট হ্যাকার বলা হয়। সাধারণত গ্রে হ্যাট হ্যাকারদের হোয়াইট এবং ব্ল্যাক উভয় ধরনের অভিজ্ঞতা থাকে। তবে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের সবসময় ভিলেন এর চরিত্রে দেখা হয়। এর পেছনে অবশ্য তাদের কাজের ধরণ সম্পূর্ণভাবে দায়ী। কারণ তারা সিস্টেমের ক্ষতি করার জন্যই তাদের হ্যাকিং মেধা ইউজ করে। এধরণের হ্যাকার থেকে সবসময় দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।

ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার কারা?

আমরা ইতোমধ্যে হ্যাকারের প্রকারভেদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছি। এদের মধ্যে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের সব থেকে ডেঞ্জারাস হিসেবে ধরা হয়। কারণ এরা হ্যাকিং করে টার্গেটের ক্ষতি করার জন্য। যেমন ডার্ক ওয়েবে আপনি ফোরাম গুলোতে আপনি হাজার হাজার পাসওয়ার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড সেল পোস্ট দেখতে পাবেন।

আপনি বর্তমানে যে সকল পাসওয়ার্ড ইউজ করছেন তা যে ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাবে না তার কোন গ্যারান্টি দিতে পারবেন না। অথবা আপনার ক্রেডিট কার্ডে রাখা টাকা যে অন্য কেউ ইউজ করছে না তার নিশ্চয়তা সঠিকভাবে দিতে পারবেন না। মাস শেষে যখন ইউজ রিপোর্ট আসবে তখন বিল পে করার সময় বুঝতে পারবেন আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। বিভিন্ন হ্যাকিং মেথড ইউজ করে চুরি করাই ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের কাজ।

এসকল কাজের বাইরেও তারা অনেক কিছু করে। যেমন আপনার ফোন হ্যাক করে সেনসিটিভ ডাটা চুরি করে পরবর্তীতে সেগুলো দিয়ে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করা। পার্সোনাল ডাটা সোশ্যাল মিডিয়ায় বা অন্য কোন পাবলিক পোর্টালে উন্মুক্ত করে দেওয়া ইত্যাদি। এগুলো ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের সব থেকে ছোট লেবেলের কাজ। এরা এর থেকেও অনেক বড় বড় কাজ করে থাকে। তাদের হ্যাকিং এর পেছনে টাকা ইনকাম অনেক বড় একটি কারণ। ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারের কাজ করার ফিল্ড অনেক বড়।

তারা একা একা কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। একা কাজ করার বাইরে তারা সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধী গ্রুপের সাথেও কাজ করে। কারন গ্রুপ করে কাজ করলে বেশি ইনকাম করার সম্ভাবনা থাকে। তারা অবৈধভাবে সিস্টেমে প্রবেশ করে ম্যালওয়ার ইঞ্জেক্ট করে দেয়। এসব ক্ষতিকারক ম্যালওয়ার পুরো সিস্টেমকে আক্রান্ত করে। বেশিরভাগ ম্যালওয়ার সিস্টেমে থাকা ফাইল নষ্ট করে দেয়। সিস্টেমের ফাইল সিস্টেম হোল্ড করে রাখে যাতে কেউ ফাইল গুলো অ্যাক্সেস করতে না পারে। অনেক সময় ফাইল লক করে মালিকের কাছে মুক্তিপণ দাবী করা হয়।

এ ধরনের একটি অ্যাটাকের নাম ওয়ানাক্রাই র‍্যানসমওয়্যার। যা পুরো বিশ্বের মোট ৩ লাখের বেশি কম্পিউটার আক্রান্ত করে। ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে সব ধরনের ইন্টারনেট ইউজারের ডাটা চুরি এবং তা অবৈধ কাজে ইউজ করে। এ যাবৎ কালের সফল এবং ভয়ানক ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার হিসেবে কেভিন মিটনিক, আলবার্ট গঞ্জালেজ ব্যাপক পরিচিত। যদিও কেভিন মিটনিক বর্তমানে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকিং থেকে বের হয়ে হোয়াইট হ্যাট হ্যাকিং নিয়ে কাজ করছে।

ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায়

নিজেকে হ্যাকিং থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমে অপারেটিং সিস্টেম নির্বাচন করা নিয়ে সচেতন হতে হবে। কারণ উইন্ডোজ সিস্টেম সব থেকে বেশি হ্যাক হয়। সে হিসেবে ম্যাক খুব কম হ্যাক হয় এবং লিনাক্স হ্যাক হয়না বললেই চলে।

উইন্ডোজ ইউজ করলে সবসময় লেটেস্ট আপডেট ইন্সটল করতে হবে। মাইক্রোসফট নিয়মিত সিকিউরিটি প্যাচ রিলিজ করে। এসকল সিকিউরিটি প্যাচ ইন্টিগ্রেট করার জন্য উইন্ডোজ সবসময় আপডেটেড রাখতে হবে। সিকিউরিটি শক্ত করার জন্য আপডেটেড এবং শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ফায়ারওয়াল ইউজ করতে হবে।

ক্র্যাক সফটওয়্যার ইউজ করা থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ ক্র্যাক সফটওয়্যারে বেশিরভাগ সময় ম্যালওয়্যার এবং ক্ষতিকারক কোড দেওয়া থাকে। যা পুরো সিস্টেমে অ্যাক্সেস নেওয়ার জন্য ব্যাকডোর তৈরি করে।

ভালো এবং উন্নতমানের এন্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে। এন্টিভাইরাস ক্ষতিকারক ভাইরাস থেকে সিস্টেমকে সুরক্ষা দেয়। পর্ণ ওয়েবসাইট ভিজিট করা বন্ধ করতে হবে। কারণ পর্ণ ওয়েবসাইটে প্রায় ক্ষেত্রে ভাইরাস সেটআপ করা থাকে। সে সব সাইটে কোথাও ক্লিক করলে বা নিজের পার্সোনাল ডাটা দিলে তা হ্যাকারের কাছে চলে যেতে পারে।

সকল ধরনের ট্রানজেকশনের জন্য এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সিস্টেম ইউজ করতে হবে। এতে আপনার ফুল কানেকশন সেফ রুট দিয়ে ট্র্যাভেল করবে এবং হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। ইমেইলে আসা এটাচমেন্ট ওপেন করার আগে চেক করে দেখতে হবে ট্রাস্টেড সোর্স থেকে এসেছে কি না। ইমেইলের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ হ্যাকিং এর শিকার হচ্ছে।

কোন অনলাইন সার্ভিস ইউজ করার আগে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি শক্ত কিনা। কারণ আপনি নিজে হ্যাক না হলেও আপনার কোম্পানি হ্যাক হয়ে আপনার ডাটা লিক হয়ে যেতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া ইউজ করার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। সেখানে সবার সাথে নিজের পার্সোনাল বিষয় শেয়ার করা যাবে না। কারণ যার সাথে সব শেয়ার করছেন সে যে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মেথড ইউজ করে আপনাকে হ্যাক করছে না তা বুজবেন কীভাবে? রিস্ক না নেওয়ার চাইতে সেফ থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ইন্টারনেট কানেক্টেড সকল ডিভাইস হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। যদি সচেতনতার সাথে এসকল ডিভাইস ব্যবহার না করা হয় তাহলে যে কোন সময় হ্যাকিং এর শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার যারা ইন্টারনেট সন্ত্রাসী নামে পরিচিত তাদের থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ। পুরো পোস্টে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার কারা এবং তাদের থেকে নিজেকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যাবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। পোস্ট সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন ধন্যবাদ।  

Leave a Comment