কখনো কি চিন্তা করেছেন আপনার ফোনের গ্যালারীতে রাখা ফটো গুলো যদি অনলাইনে হাজার হাজার মানুষ দেখে তখন আপনার কেমন লাগবে? বিশ্বে প্রতিনিয়ত নানান ধরনের হ্যাকিং এর খবর পাওয়া যায়। ছোট ছোট ওয়েবসাইট থেকে বড় বড় কোম্পানি সবকিছু হ্যাকিং এর শিকার হয়। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপডেট না করলে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা খুব কঠিন।
তবে হ্যাকিং যেমন মানুষের অনেক ক্ষতি করে তেমনি আবার অনেক উপকার করে। বিশ্বব্যাপী সাইবার যুদ্ধের দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায়। হ্যাকিং সম্পর্কে আপনাদের ধারণা আরও স্পষ্ট করতে আজকে আমরা গ্রে হ্যাট হ্যাকার কারা তা নিয়ে আলোচনা করবো। এতে হ্যাকারদের প্রকারভেদ এবং হ্যাকিং দুনিয়ার বৈচিত্র্য সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা হবে।
গ্রে হ্যাট হ্যাকার
হ্যাকারের হ্যাকিং করার উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে এর প্রকারভেদ করা হয়েছে। আমরা হ্যাকিং বলতে যে রকম কল্পনা করি তা আসলে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকিং নির্ভর। অর্থাৎ সরাসরি হ্যাকিং না দেখার কারণে আমরা মুভিতে যেমন দেখানো হয় তাকেই হ্যাকিং বলে থাকি। মুভি তে টুইস্ট আনার জন্য মূলত হ্যাকারদের সিস্টেমের অবৈধ অনুপ্রবেশকে দেখানো হয়। এতে আমরা হ্যাকিং করাকে অন্যরকম ভাবে দেখি। তবে বাস্তব কিন্তু একদম ভিন্ন এবং মুভির সাথে এর তেমন মিল নেই।
যাইহোক আজকে আমরা হ্যাকিং এর একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রকারভেদ গ্রে হ্যাট হ্যাকিং সম্পর্কে জানবো। সাধারণত ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে টার্গেটের সিস্টেমে অবৈধ অনুপ্রবেশকে গ্রে হ্যাট হ্যাকিং বলে। গ্রে কালার হলো ব্ল্যাক এবং হোয়াইট কালারের সমন্বয়। অর্থাৎ যারা গ্রে হ্যাট হ্যাকার তাদের মধ্যে ব্ল্যাক হ্যাট এবং হোয়াইট হ্যাট উভয় হ্যাকারের গুনাগুন আছে।
বিষয়টি আরও পরিষ্কার ভাবে বুঝতে হলে ব্ল্যাক এবং হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার কাকে বলে তা জানা জরুরী। ছোট করে বর্ণনা করতে গেলে হোয়াইট হ্যাট হ্যাকাররা সিস্টেম হ্যাক করে অথরিটির পারমিশন নিয়ে। তারা সিস্টেমের কোন ক্ষতি করে না বরং উক্ত সিস্টেমকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যাবে সেই পরামর্শ দেয়। অন্যদিকে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারের উদ্দেশ্য হলো তারা অবৈধ ভাবে সিস্টেমে ঢুকে ডাটা চুরি করা এবং ডাটা নষ্ট করা।
গ্রে হ্যাট হ্যাকারের মধ্যে উভয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এরা সিস্টেমে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে তবে সিস্টেম অক্ষত রেখে মূল অ্যাডমিনকে সমস্যার কথা জানিয়ে দেয় এবং ঠিক করতে বলে। অনেক সময় তারা সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করার পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু অর্থ দাবী করে। অথবা একজন সিস্টেম হ্যাক করে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কে জানিয়ে দেয় এবং তা ঠিক করার জন্য তার পরিচিত বন্ধুকে রেফার করে। এভাবে তারা একে অপরকে রেফার করে অর্থ উপার্জন করে। বিশ্বে প্রায় প্রতিটি দেশেই এ ধরনের হ্যাকার দের নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপ পরিচালিত হচ্ছে। তারা একসাথে অথবা ইন্ডিভিজুয়াল ভাবে টার্গেটে অ্যাটাক করে হ্যাক করে।
মোটকথা গ্রে হ্যাট হ্যাকার ক্যাটাগরি হলো সিকিউরিটি এক্সপার্ট যারা গোপনে সিস্টেম হ্যাক করে এবং তা ঠিক করার জন্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কে তাগিদ দেয়। তারা সিস্টেমের কোন ডাটা চুরি অথবা কোন ক্ষতি করে না।
গ্রে হ্যাট হ্যাকার ভালো না খারাপ?
আমরা সবাই জানি যে হ্যাকার দের তাদের কাজের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে ক্লাসিফিকেশন করা হয়। সে অনুযায়ী ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার হলো সাইবার ক্রিমিনাল অন্যদিকে হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার হলো সিকিউরিটি সোলজার।
আর গ্রে হ্যাট হ্যাকার হলো ক্রিমিনাল মাস্টারমাইন্ড উইথ গুড হার্ট। অর্থাৎ তারা অনেকটা ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের মত তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। ক্রিমিনালের মত চিন্তা ভাবনা থাকার কারণে তারা ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের পদ্ধতি ধরতে পারে। যা সিস্টেমের অ্যাক্সেস কোন সাইবার ক্রিমিনালের হাতে কি কি উপায়ে পরতে পারে তা খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
তাদের দোষ হলো তারা কোন সিস্টেম হ্যাক করার আগে বা দুর্বলতা খোঁজার আগে মালিককে জানায় না। তারা তাদের হ্যাকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে যদি কোন সমস্যা পায় তখন তা অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কে জানায়। আইন অনুযায়ী তাদের এই কাজ ক্রাইমের সমান। কারণ এতে মানুষের ডাটার গোপনীয়তা বজায় থাকে না।
এছাড়া কোন কোম্পানির দুর্বলতা প্রকাশ পেলে মানুষ সেই সার্ভিসের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। যা সেই কোম্পানির জন্য অনেক ক্ষতিকর। এসকল দিক বিবেচনা করে গ্রে হ্যাট হ্যাকারদের মানুষ একটু কম বিশ্বাস করে। কারণ তাদের মধ্যে যদিও খারাপ কোন ইন্টেনশন নেই কিন্তু তারা যদি রাস্তা পরিবর্তন করে তখন কি হবে?
এসকল কারণে মানুষ হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারদের সব থেকে বেশি বিশ্বাস করে। অন্য দিকে ধীরে ধীরে গ্রে হ্যাট হ্যাকারদের উপরে মানুষের বিশ্বাস আসা শুরু হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এই টার্ম আদৌ থাকবে কিনা বা তাদের যে কোন একটি ক্যাটাগরি তে ফেলা হবে নাকি তা সময় আসলে বোঝা যাবে। সর্বোপরি গ্রে হ্যাট হ্যাকার ভালো না খারাপ তা নির্ভর করে আপনি কীভাবে বিষয়টা দেখেন তার উপরে। তাই কয়েকটি লাইন দিয়ে তাদের কার্যক্রম বিচার করা উচিত হবে না।
গ্রে হ্যাট হ্যাকার থেকে নিরাপদ থাকার উপায়
হ্যাক হওয়া সত্যি এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। আপনার সব ডাটা অন্য কারো কাছে থাকবে তা কখনোই ভালো হবে না। এ সকল ডাটা ইউজ করে হ্যাকার আপনার আইডেন্টিটি পর্যন্ত চুরি করে নিজের সুবিধা মত ইউজ করতে পারবে।
সময় থাকতে যদি নিজেকে হ্যাকিং থেকে বাঁচাতে না পারেন তখন প্রশাসনের পেছনে দৌড়ানো ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। মুলত হ্যাকিং থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য সবার প্রথম হ্যাকিং সম্পর্কে জানতে হবে। যদি হ্যাকিং সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকে তাহলে আপনি সহজেই আপনার সিস্টেম এবং ডিভাইসের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে পারবেন। দুর্বলতা খুঁজে পাওয়ার পর তা ঠিক করলে তখন আপনার ডিভাইস এবং সিস্টেম নিরাপদ থাকবে। নয়তো আপনাকে কোন অভিজ্ঞ হ্যাকারের সাহায্য নিয়ে দুর্বলতা গুলো খুঁজে বের করে ঠিক করে নিতে হবে। ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে হবে যাতে ডিভাইস বা সিস্টেম আক্রান্ত না হয়।
সবসময় আপডেটেড অপারেটিং সিস্টেম ইউজ করতে হবে। প্রতিটি আপডেটের সাথে আসা সিকিউরিটি প্যাচ ইন্সটল করে রাখতে হবে। এছাড়া এক্সটার্নাল এন্টিভাইরাস ইউজ করা শুরু করতে হবে। লেটেস্ট এন্টিভাইরাস গুলো অনেক উন্নত ফিচার সম্বলিত। তারা পুরো সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক সহ ইন্টারনেট ব্রাউজার মনিটর করে। যা সকল ধরনের ভাইরাস বা ডেঞ্জারাস স্ক্রিপ্ট থেকে সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ককে রক্ষা করে।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম সবথেকে বেশি হ্যাক হয়। এ জন্য অল্টারনেটিভ অপারেটিং সিস্টেম যেমন লিনাক্স এবং ম্যাক ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম হ্যাকারদের ভাইরাস এবং খারাপ স্ক্রিপ্ট থেকে সিস্টেম সুরক্ষিত রাখে। কারণ উইন্ডোজ সিস্টেম দুর্বল হওয়ার কারণে এটি হ্যাক করা অন্যান্য সিস্টেম থেকে অপেক্ষাকৃত সহজ। যার কারণে হ্যাকাররা উইন্ডোজের জন্য ভাইরাস তৈরি করে থাকে। লিনাক্স এবং ম্যাক এই ধরনের ঝুঁকিতে কম থাকে যা সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখে।
সর্বোপরি সচেতনভাবে ডিভাইস, সিস্টেম ও নেটওয়ার্ক ইউজ করলে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব। ডাটার সুরক্ষা দেওয়া একটি অতি প্রয়োজনীয় কাজ যা দিন দিন আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ডাটা ইউজ করে অসৎ উদ্দেশ্যের মানুষ এবং গোষ্ঠী মানব জাতীকে অন্ধকার যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সময় থাকতে আমাদের এসব ক্রাইম বন্ধ করতে হবে। দেরি হয়ে গেলে আমরা সবাই অসৎ মানুষের দাসে পরিণত হবো। এই লেখায় নিজের ডাটা সুরক্ষিত রাখার জন্য কি কি করতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি লেখাটি পড়ে গ্রে হ্যাট হ্যাকার সম্পর্কে আপনার ধারণা স্পষ্ট হয়েছে এবং তাদের কাজের ধরণ সম্পর্কে সন্দেহ দূর হয়েছে।