বিশ্বের সেরা ৫ জন হ্যাকারদের জীবনী

কিছু মানুষ আছে যারা চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে যারা গতানুগতিক চিন্তা ধারার বাইরে এসে নতুন কিছু করার সাহস করে। আমাদের সমাজে এরকম মানুষের অনেক অভাব। বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশন কোন প্রোডাক্টিভ কাজ না করে অযথা সময় নষ্ট করে চলেছে। আমরা আজকে এমন কিছু স্পেশাল মানুষ সম্পর্কে জানবো যারা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বে স্মরণীয় হয়ে আছে। অর্থাৎ হ্যাকিং বিদ্যা কাজে লাগিয়ে তারা বিশ্বে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। আমাদের এসকল সুপার হিউম্যানদের নিয়ে সবসময় কৌতূহল কাজ করে। আজকের লেখার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের সেরা ৫ জন হ্যাকারদের জীবনী নিয়ে আলোচনা করবো।

বিশ্বের সেরা ৫ জন হ্যাকার

গোটা বিশ্বে অসংখ্য হ্যাকার থাকলেও সর্বকালের সেরাদের তালিকায় সবাই স্থান করে নিতে পারেনি। সেরাদের তালিকায় স্থান পাওয়ার জন্য অনেক বড় কোন কাজ করতে হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির সিস্টেম হ্যাক করা অথবা সরাসরি প্রশাসনিক ফ্যাসিলিটির সিস্টেমে অনুপ্রবেশের মত সাহস দেখাতে হয়েছে। তাদের এই সমস্ত কাজের কারনে তারা হ্যাকার কমিউনিটিতে সবসময় প্রশংসিত হয়েছে। এমনকি তাদের কার্যকলাপের প্রশংসা খোদ সিকিউরিটি এক্সপার্টরাও করেছে। যাইহোক কথা না বাড়িয়ে চলুন বিশ্বসেরা ৫ জন হ্যাকারের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা শুরু করা যাক।

কেভিন মিটনিক

মিটনিক একজন বিধ্বংসী কম্পিউটার হ্যাকার। আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস তাকে আমেরিকার ইতিহাসের মোস্ট ওয়ান্টেড কম্পিউটার ক্রিমিনাল হিসেবে বিবেচনা করে। তার সকল কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে হলিউডে একটি মুভি নির্মিত হয়েছে যার নাম “Track Down”

তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৬৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম কেভিন ডেভিড মিটনিক এবং হ্যাকিং দুনিয়ায় তাকে দ্য কন্ডর ও দ্য ডার্কসাইড হ্যাকার নামে ডাকা হয়। তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মেথড ইউজ করে লস এঞ্জেলেসের বাস সিস্টেমের পাঞ্চিং কার্ড বাইপাস করে। অর্থাৎ মাত্র টিনেজ বয়সেই তিনি তার হ্যাকিং জার্নি শুরু করে দেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট কর্পোরেশনের কম্পিউটার হ্যাক করে আনঅথরাইজ অ্যাক্সেস নেয়। তারপর সেখান থেকে একটি সফটওয়্যারের সোর্সকোড অর্থাৎ সফটওয়্যারটির কপি ডাউনলোড করে। 

এতে তাকে ১২ মাসের জেল এবং ৩ বছর আন্ডার সুপারভিশনে থাকার শাস্তি পেতে হয়। কিন্তু আন্ডার সুপারভিশনের শেষ বছরে তিনি আবার প্যাসিফিক বেল নামক একটি টেলিফোন কোম্পানির ভয়েস মেইল সিস্টেম হ্যাক করে। এতে তার বিরুদ্ধে আবার এরেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু হয় তবে তাকে ধরার আগেই তিনি পালিয়ে যায়। যার ফলে তার নাম পলাতক আসামীর লিস্টে অ্যাড হয়ে যায়।এগুলো ছাড়াও তার অনেক গুলো হ্যাকিং এর ঘটনা আছে। তবে তিনি তার আর্ট অফ ডিসেপশন বইয়ে বলেছে তিনি হ্যাকিং এর জন্য কোন সফটওয়্যার, টুল বা ডিভাইস ইউজ করেননি। তিনি সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মেথড ইউজ করে পাসওয়ার্ড এবং অ্যাক্সেস কোড সংগ্রহ করতেন। 

তার এসকল হ্যাকিং কার্যকলাপের জন্য ১৯৯৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি FBI তাকে নর্থ ক্যারোলিনায় তার এপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় তার কাছে ১০০ এর বেশি ক্লোন সেলুলার ফোন এবং অনেকগুলো মিথ্যা পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। বিভিন্ন মেয়াদে সাঁজা ভোগের পর তিনি অবৈধ হ্যাকিং থেকে নিজেকে সরিয়ে আনেন। বর্তমানে তিনি তার নিজের সিকিউরিটি কন্সাল্টিং কোম্পানি মিটনিক সিকিউরিটি কন্সাল্টিং এর সিইও এবং KnowBe4 কোম্পানির চীফ হ্যাকিং অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।    

জনাথন জেমস

জেমস তার হ্যাকিং জার্নি অনেক কম বয়সে শুরু করেন। হ্যাকিং কমিউনিটিতে তাকে সবাই “c0mrade” নামে চেনে। তার হ্যাকিং জীবন খুব স্বল্প সময়ের জন্য ছিল। সে ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে ফ্লোরিডায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার প্রথম অপরাধ সংঘটিত করে। এছাড়া ১৯৯৯ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবর এই দুই মাসের মধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি বড় বড় হ্যাকিং পরিচালনা করেন।

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো BellSouth এবং Miami-Dade school system হ্যাক করা। এতে তিনি প্রশাসনের নজরে পরে যান। পরবর্তীতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের Defense Threat Reduction Agency (DTRA) ডিভিশনের কম্পিউটার হ্যাক করে তাতে ব্যাকডোর ইন্সটল করে। এতে তিনি স্নিফার ইউজ করে এমপ্লয়িদের সকল মেসেজ এবং ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দেখতে পেতেন।

তার জীবনের সবথেকে বড় হ্যাকিং ছিল নাসার কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করা। তিনি নাসার নেটওয়ার্ক হ্যাক করে ১.৭ মিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের সফটওয়্যার সোর্স কোড ডাউনলোড করে। তারা তাদের এই লস পূরণ করার জন্য ৪১ হাজার ডলার খরচ করে পুরো তিন সপ্তাহ ফুল নেটওয়ার্ক বন্ধ রেখে ইনভেস্টিগেশন করে। ২০০০ সালে তিনি আত্মসমর্পণ করেন এবং আদালতে নিজেকে তার অপরাধের জন্য গিল্টি স্বীকার করেন। তার এত বড় বড় অপরাধের পরেও শুধু অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারনে তাকে কিশোর কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তাকে নাসা এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে লেটার লেখার আদেশ দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল ডিপার্টমেন্টাল কর্পোরেশন TJX এর কম্পিউটার সিস্টেমে অনেক বড় হ্যাকিং অ্যাটাক হয়। এতে প্রশাসন জেমসকে অপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার এবং ইনভেস্টিগেশন করে। কিন্তু এই ঘটনার সাথে তার কোন সম্পর্ক না থাকায় তিনি অপমানে এবং দুঃখে আত্মহত্যা করেন।   

আলবার্ট গঞ্জালেজ

 তার সবথেকে পছন্দের কাজ ছিল ক্রেডিট কার্ড নাম্বার চুরি করা। তিনি তার হ্যাকিং জ্ঞান ক্রেডিট কার্ড ফ্রড করার পেছনে ব্যায় করেন। এ কাজ করার জন্য তিনি “ShadowCrew” নামক একটি গ্রুপ পরিচালনা করতেন। তিনি ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইডার এবং মালিকদের জন্য আতঙ্ক ছিল। তিনি ২০০৫ থেকে ২০০৭ এই দুই বছরে ১৭০ মিলিয়ন ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করেছে। তিনি এবং তার টিম হ্যাকিং এর জন্য এসকিউএল ইনজেকশন পদ্ধতি ইউজ করতো।

গঞ্জালেজ নাম বাদেও তার আরও ৮ টি আলাদা আলাদা নাম ছিল। তিনি ১৯৮১ সালে কিউবায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৭০ মিলিয়ন ক্রেডিট কার্ড চুরি করার পর TJX Companies এবং Heartland Payment Systems এর ডাটাবেস হ্যাক করে সেখানে থাকা সব ক্রেডিট কার্ড নাম্বার চুরি করে। মোট কথা তিনি একজন ভয়ংকর এবং সফল হ্যাকার। তিনি প্রথম ২০০৮ সালে প্রশাসনের হাতে গ্রেপ্তার হন। যখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তখন তার কাছে ১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্যাশ ছিল। এই অর্থ তিনি হ্যাকিং করেই সংগ্রহ করেছেন। তার এসকল অপরাধের জন্য তাকে ২০ বছরের জেল দেওয়া হয়।

রবার্ট টাপ্পান মরিস

তিনি প্রথম ব্যক্তি যে কম্পিউটার ভাইরাস বা ওয়রম তৈরি করেন। মরিস ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে কম্পিউটার সাইন্টিস্ট এবং উদ্যোক্তা। কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় তিনি ১৯৮৮ সালে “Morris Worm” নামে প্রথম ভাইরাস তৈরি করেন এবং তা ছড়িয়ে দেন। তার এই ভাইরাসের কাজ ছিল কম্পিউটারকে স্লো করে দেওয়া। তার এই ওয়রম প্রায় ৬ হাজার কম্পিউটার একবারে অচল করে দেয়। ১৯৮৯ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ৩ বছর প্রবেশন, ৪০০ ঘণ্টা কমিউনিটি সার্ভিস এবং ১০ হাজার ডলার ফাইন দেওয়ার শাস্তি দেওয়া হয়।   

গ্যারি ম্যাককিনন 

আমেরিকার ইতিহাসের সবথেকে বড় মিলিটারি হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটিয়েছেন ম্যাককিনন। তিনি ইউএস আর্মি এবং নাসার মোট ৯৭ টি কম্পিউটার হ্যাক করেন। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ফ্রী এনার্জি সুপারসেশন এবং এলিয়েন সম্পর্কে তারা কি কি লুকাচ্ছে তা জানা। তিনি স্কটল্যান্ডে ১৯৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। অনলাইনে তাকে সবাই “Solo” নামে চেনে। তিনি মূলত লন্ডনে তার প্রেমিকার আন্টির বাসায় বসে ১৩ মাস ধরে তার এই হ্যাকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। তিনি ইউএস আর্মির ওয়াশিংটন নেটওয়ার্কের ২০০০ টি কম্পিউটার শাটডাউন করে দেয়।  তাদের মূল ওয়েবসাইটে “Your security is crap” সম্বলিত একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়। এছাড়া তিনি Earle Naval Weapons Station এর অস্ত্র সাপ্লাই লগ ডাটা ডিলিট করে দেয়। এতে তাদের সকল সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় এবং ৭ লক্ষ ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

 উপরে আলোচনা করা পাঁচ জন বিশ্ববিখ্যাত হ্যাকার। তাদের হ্যাকিং জীবন সত্যি রোমাঞ্চকর ছিল। আশাকরি লেখাটি পড়ে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত অনেক বিষয় জানতে পেরেছেন। মতামত জানাতে অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন।  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top