সেরা ১০টি হ্যাকিং প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ

হ্যাকিং বিদ্যা আয়ত্ত করতে হলে আমাদের সবার প্রথমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। এদের মদ্ধে যেমন টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকতে হবে তেমনি হ্যাকিং পদ্ধতি সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। বিশেষ করে হ্যাকিং করার জন্য যে যে ল্যাঙ্গুয়েজ জানতে হবে সে ব্যাপারে আমাদের সঠিক নলেজের অনেক অভাব। যাইহোক বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ প্রচলিত আছে। কিন্তু এদের মদ্ধে কিছু ল্যাঙ্গুয়েজ আছে যেগুলো হ্যাকিং করার জন্য ইউজ হয়ে থাকে। আজকের লেখায় এমন সেরা ১০টি হ্যাকিং প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে আলচোনা করা হবে। শুধু হ্যাকিং বাদেও এসকল ল্যাঙ্গুয়েজ ওয়েবসাইট, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন অথবা সফটওয়্যার তৈরির জন্য ইউজ করা হয়।

হ্যাকিং প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ

Python 

পাইথন একটি শক্তিশালী প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। ১৯৯১ সালে Guido van Rossum পাইথনকে রিলিজ করেন। ছোট এবং সহজবোধ্য কম্যান্ড সিস্টেম হওয়ার কারনে অতি দ্রুত এটি ডেভেলপারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়। পাইথনের রক্ষনবেক্ষন এবং মডিফিকেশন করার দায়িত্বে আছে পাইথন সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন নামক একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে পাইথনের লেটেস্ট স্টাবল ভার্সন হলো ৩.৯.৫ এবং পূর্বের ভার্সনের থেকে এটি বেসি স্টাবল। এটি এত পরিমান পপুলারিটি পাওয়ার পেছনে এর সহজবোধ্যতা এবং কাজ করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে গুগল এবং নাসার মত বড় বড় টেক কোম্পানি পায়থন ইউজ করে। এখানে প্রোগ্রাম লেখা অনেজ সহজে আয়ত্ত করা যায়। হ্যাকিং এর জন্য বিভিন্ন মিলিসিয়াস কোড, এক্সপ্লইট, ম্যালওয়্যার ইত্যাদি পায়থনে লেখা হয়। এছাড়া অন্যান্য অনেক হ্যাকিং রিলেটেড বিষয়ে এর সরাসরি হস্তক্ষেপ আছে। বিশেষ করে ওয়েব নির্ভর হ্যাকিং করার জন্য পায়থন বেস্ট।  

C

সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজকে বলা হয় মাদার অফ অল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। কারন এটি অনেক পুরাতন এবং জটিল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। মুলত সকল জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম সি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে তৈরি। যেমন উইন্ডোজ, ইউনিক্স, লিনাক্স সহ অন্যান্য লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন গুল সি দিয়ে তৈরি। এছাড়া অন্যান্য ল্যাঙ্গুয়েজের ভিত্তি সি থেকেই শুরু। অর্থাৎ এটি কোর পর্যায়ের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। অন্যান্য ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার আগে সি এর অ্যাডভানস লেভেল না জানলেও চলবে। কিন্তু বেসিক পর্যায়ের নলেজ থাকতেই হবে। অন্যদিকে সি জানা থাকলে অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে যা এক্সপ্লইট তৈরি করতে সাহায্য করে। সি ইউজ করে অপারেটিং সিস্টেমের র‍্যাম থেকে শুরু করে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার ম্যানুপুলেট করা যায়। সাথে সাথে অন্যান্য দূর্বলতা খুঁজে বের করে তা ব্রেক করার উপায় খুঁজে পাওয়া যায়। এসকল কারনে সি কে অন্যতম সেরা হ্যাকিং ল্যাঙ্গুয়েজ বলা হয়।  

SQL 

এসকিউএল একটি ডাটাবেস ল্যাঙ্গুয়েজ। অর্থাৎ এটি ডাটাবেস তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইউজ হয়ে থাকে। এসকিউএল এর পূর্ণরূপ হলো স্ট্যান্ডার্ড কুয়েরি ল্যাঙ্গুয়েজ। বর্তমান সময়ের প্রায় সকল ওয়েবসাইট এসকিউএল ডাটাবেস ইউজ করে। বিশেষ করে ওয়ার্ডপ্রেস তাদের ডিফল্ট ডাটাবেস হিসেবে এসকিউএল ইউজ করে থাকে। আমরা জানি বর্তমান সময়ে ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হ্যাক করার জন্য অন্যতম একটি টার্গেট। কারন একজন ইউজারের সকল তথ্য এগুলোতে জমা হয়। এসকিউএল ডাটাবেসে ইউজারের সকল ডাটা যেমন নাম, ঠিকানা, ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড সহ অনেক তথ্য জমা থাকে। কোন ভাবে ডাটাবেসের অ্যাক্সেস নিতে পারলে একই সাথে অনেক বড় সাইবার হামলা করা সম্ভব। অতএব যদি এসকিউএল সম্পর্কে ধারণা থাকে তাহলে ডাটাবেস হ্যাক করা সহজ হয়। বিশেষ করে এসকিউএল ইনজেকশন মেথড পারফর্ম করা সহজ হয়। এই জন্য প্রতিটি হ্যাকারের অন্যান্য ল্যাঙ্গুয়েজ জানার পাশাপাশি এসকিউএল ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কেও জানতে হবে। 

JavaScript 

শুরুতে জাভাস্ক্রিপ্ট একটি ক্লাইন্ট সাইড বা ফ্রন্ট এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল। ফ্রন্ট এন্ডে বিভিন্ন ফাংশন এবং ফিচার অ্যাড করার জন্য এটি ইউজ করা হতো। কিন্তু নোড জেএস রিলিজ করার মাধ্যমে তারা ব্যাক এন্ডে সাপোর্ট দেওয়া শুরু করেছে। জাভাস্ক্রিপ্টকে পিএইচপি এর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হয়। কারন এটি বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে পিএইচপি এর বিকল্প হিসেবে ইউজ করা হচ্ছে। যাইহোক জাভাস্ক্রিপ্ট একটি জটিল ল্যাঙ্গুয়েজ। এর সিনট্যাক্স গুলো মনে রাখা একটু কঠিন। বর্তমানে অনেক পাওয়ারফুল ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন আছে যারা জেএস ইউজ করে। হ্যাকিং মেথড হিসেবে পরিচিত ক্রস সাইড স্ক্রিপ্টিং বা এক্সএসএস এবং ব্রুট ফ্রোস অ্যাটাক এক্সিকিউট হওয়ার জন্য জাভাস্ক্রিপ্টের প্রয়োজন পরে। 

PHP

পিএইচপি একটি মোস্ট পপুলার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। এটি অনেক লম্বা সময় ধরে মার্কেটে আছে। জনপ্রিয় সিএমএস ওয়ার্ডপ্রেস এবং ড্রুপাল PHP দিয়ে তৈরি। এছাড়া বিশ্বের অনেক ওয়েবসাইটের ব্যাকএন্ডের কাজ করা হয়েছে পিএইচপি দিয়ে। এখন এই ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে যদি আপনার অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে ওয়েব হ্যাকিং আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। যেমন ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হ্যাক করার জন্য বিভিন্ন অ্যাটাক পরিচালনা করা। এছাড়া পিএইচপি ইউজ করে তৈরি করা ওয়েবসাইটে দূর্বলতা খুঁজে বের করতে গেলে এই ল্যাঙ্গুয়েজ জানা প্রয়োজন। ওয়েব সম্পর্কিত হ্যাকিং করার জন্য এসকিউএল সহ পিএইচপি জানতেই হবে। এতে উক্ত ওয়েবসাইট কিভাবে কাজ করে এবং কিভাবে উক্ত সাইটের দূর্বলতা খুঁজে বের করা সহজ হবে। 

C++

সি প্লাস প্লাস প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সি ল্যাঙ্গুয়েজের মতই লো-লেভেল এবং শক্তিশালী। পেইড এবং কর্পোরেট অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যারের ট্রায়াল বাইপাস বা লাইসেন্স অ্যাক্টিভ  করার জন্য সি প্লাস প্লাস বেস্ট। আমরা উইন্ডোজের জন্য যে ক্র্যাক সফটওয়্যার ইউজ করি সেগুলো সাধারণত এই ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়েই করা। কারন সি প্লাস প্লাস রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে সফটওয়্যারের কোড এডিট করার অ্যাবিলিটি দেয়। এছাড়া কোর লেভেলের অ্যাক্সেস পেতে সি এর মতই সি প্লাস প্লাস কাজ করে। লিনাক্সের জন্য তৈরি করা বিভিন্ন রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং টুল সি প্লাস প্লাস দিয়ে তৈরি। মোটকথা সফটওয়্যার হ্যাকিং বা ম্যালওয়্যার অ্যাটাক পরিচালনা করার জন্য সি প্লাস প্লাস একটি আদর্শ মাধ্যম। প্রোগ্রামিং দুনিয়ায় এই ল্যাঙ্গুয়েজের কদর দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।  

JAVA

জাভা একটি মোস্ট পপুলার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। অনেকেই একে জাভাস্ক্রিপ্টের সাথে গুলিয়ে ফেলে। তবে দুইটি পুরোটাই আলাদা ল্যাঙ্গুয়েজ। জাভা একটি ক্রস প্লাটফর্ম ল্যাঙ্গুয়েজ। অর্থাৎ আপনি একই সাথে মোবাইল, ডেক্সটপ কে টার্গেট করে কোড করতে পারবেন। মোবাইল ডিভাইসের জন্য তৈরি করা অ্যাপ্লিকেশন গুলো জাভা দিয়ে তৈরি। এছাড়া Apache Tomcat এবং Spring MVC ওয়েবসার্ভারগুলো জাভা দ্বারা পরিচালিত হয়।তো আপনি যদি জাভা ল্যাঙ্গুয়েজ জেনে থাকেন তাহলে সহজেই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং ওয়েব সার্ভার হ্যাক করতে পারবেন। 

RUBY 

রুবি একটি পাওয়ারফুল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। বিভিন্ন রকম প্রয়োজনীয় এবং দরকারি স্ক্রিপ্ট লেখার জন্য রুবি বেস্ট। এর সিনট্যাক্স অনেকটা পাইথন এর মত। তবে রুবি পাইথন এর থেকেও বেসি ওয়েব ওরিয়েন্টেড। অর্থাৎ পাইথনের থেকে সহজে রুবিকে ওয়েবে ইমপ্লিমেন্ট করা যায়। রুবিতে তৈরি করা স্ক্রিপ্ট ব্যাস স্ক্রিপ্ট হিসেবে অনেক ভালো কাজ করে। আমরা পপুলার পেনেট্রেশন টেস্টার সফটওয়্যার মেটাস্প্লইট ফ্রেমওয়ার্ক সম্পর্কে জানি। একে হ্যাকিং লাইফ স্টার্টার বলা হয়। কারন পেনেট্রেশন টেস্টার সফটওয়্যারের মধ্যে মেটাস্প্লইট সব থেকে বেসি পপুলার এবং পাওয়ারফুল। আর এই সফটওয়্যারে তৈরি করা হয়েছে রুবি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে। তাহলে বুঝতেই পারছেন রুবি জানা কতোটা জরুরি। 

Perl

পার্ল সময়ের সাথে সাথে এর সুনাম হারিয়ে ফেলেছে। কারন অন্যান্য ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন রুবি পার্লের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। তারপরেও বর্তমানে অনেক সিস্টেম আছে যারা পার্ল ইউজ করে। ডাটাবেস এক্সপ্লইট সহ অনেক হ্যাকিং টুল পার্ল ইউজ করে তৈরি করা হয়। একারনে হ্যাকিং কমিউনিটিতে পার্ল ল্যাঙ্গুয়েজের কদর এখনো আছে। নিজের প্রয়োজন মত টুল বা এক্সপ্লইট তৈরি করার জন্য পার্ল ল্যাঙ্গুয়েজ আপনাকে আয়ত্ত করতে হবে। 

Bash

ব্যাস একটি পপুলার ইউনিক্স কম্যান্ড শেল যা লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলোতে ডিফল্টভাবে ইউজ করা হয়। যদিও ব্যাসকে পুরোপুরি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে ধরা হয়না। কিন্তু প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের সাথে ইন্ট্রিগেট করে উক্ত ল্যাঙ্গুয়েজের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়। এছাড়া পেলোড এবং এক্সপ্লইট তৈরি এবং এক্সিকিউট করার জন্য ব্যাস স্ক্রিপ্ট ইউজ করা হয়। একজন হ্যাকার হিসেবে আপনাকে ব্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। 

আশাকরি উপরে বর্ণিত ১০ টি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা আরো পরিষ্কার হয়েছে। হ্যাকার হতে গেলে উপরে বর্ণিত ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে এক্সপার্ট না হলেও ব্যাসিক ধারণা রাখতে হবে। লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত বা কোন সাজেশন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top